মৃন্ময়ী রঙের আলো

।। অভিষেক দত্ত ।।

তাকে দাও মোহমগ্ন প্রণয়ঋতু
দাও চক্ষুপথ, বাতিল দূরবীন
দাও মৃন্ময়ী রঙের আলো
জলের পরিধি ভাঙে যখন
কেই বা তার হিসাব রাখে বলো?

এক

পাখিদের ঠোঁটের নিঝুম নিয়ে
চলে গেছে শেষ ট্রেন
সমস্ত জবুথুবু সংলাপ নিভে আসে
মফঃস্বলের চায়ের আড্ডায়
সান্ধ্য মৌতাত নিয়ে পায়ে পায়ে
ফিরে যায় একাকী যুবক
তাকে তুমি শিখিয়েছ ধুলোখেলা
শিখিয়েছ বিদ্যুৎ চমকানো গোপন পাঠ
তবুও সে নিমফল কুড়িয়ে নেয় পকেটে
আর হেঁটে যায় গানের স্কুলের
বিপরীত গলি বরাবর
সে বুঝেছে আজ
তুমি বিষণ্ণ ভ্রম ছাড়া
আর কিছু নও
কিচ্ছুটি নও

দুই

ঘুমের মধ্যে এক উদাসীন জাহাজ
শঙ্খনাবিক হুইসেল দিতে দিতে
ছেড়ে যায় বাতিল বন্দর
সমুদ্র শাসন প্রত্যক্ষ করেছে যে আয়ুরেখা
তাকে দাও মোহমগ্ন প্রণয়ঋতু
দাও চক্ষুপথ, বাতিল দূরবীন
দাও মৃন্ময়ী রঙের আলো
জলের পরিধি ভাঙে যখন
কেই বা তার হিসাব রাখে বলো?

তিন

তোমার নিঃশব্দ হেঁটে যাওয়াও ছড়িয়ে রয়েছে
যে সব শূন্যতা, সন্ধ্যার কোলাহল তা জানে
যে সব ঋণ রয়ে গেল,দেখা হলো না বিস্তর
সমস্ত গূঢ় গণিত ফুরিয়ে গেলে বুঝি
তোমার প্রতি চিৎকারে আমার প্রশ্রয় ছিল অফুরান
ভাঙা জলে নিভে আসে স্মৃতির বিস্তার

চার

সন্ধ্যাকালের অযথা ঋতুজল
মলিন কবিতার মত গড়িয়ে যাচ্ছে
তোমার কাঙ্খিত শুশ্রূষার দিকে
আমি শুধু ভাবি, কিভাবে মুছে দেবো
তোমার মুখের সমস্ত বলিরেখা
কিভাবে দিনান্তের শ্রম রেখে যাব
তোমার নগ্নপায়ে
শুধু ছেড়ে যাওয়ার আগে
যদি আরও একবার দাও
ভুল শেখার সম্মতি

পাঁচ

সন্ধ্যাতারার অভিমান নিয়ে অন্ধকার নামলো
খোলা চুলের নিশ্চুপ কলোনিতে
স্নানের প্রকৃত প্রস্তাবে তুরতুরে হয় মেঝের
লাল আলপনা
জলপট্টির মতো দীর্ঘ শুশ্রূষা ঋণ
অপূর্বমুদ্রায় রপ্ত করছে হারমোনিয়ামের তীক্ষ্ণ
অন্ধকার সিঁড়ি বেয়ে দোতলা থেকে নেমে আসছে
গানের মাস্টার
মাথা নিছু একা

ছয়

প্রতিটি নিরাময় আসলে
প্রত্যয়ীর মোম জ্বেলে রাখা
কাঁপা কাঁপা ছায়াআলো জ্বর
পরিমিত ওমে প্রত্যুত্তর
নির্ভার করে দেয় তোমায়
ঘুমবেলায় এসে পড়া আলোয়
ভরশূন্য বেড়ে ওঠে শরীর

ফিরতে ফিরতে যেটুকু ছোঁয়া
সেটুকুই তোমার সেরে ওঠা

সাত

মুঠোভর্তি জানলা
প্রাত্যহিক রোদের ভার মেলে দিচ্ছে
কথাহীন শহরের এ-বাড়ি ও-বাড়ি
পাখিদের ভ্রম নির্জন লিখুক
তোমাদের হেমন্তের ঝুল বারান্দায়
ডাকনামের মতো কিছু মায়া
লিখুক অব্যর্থ জ্বরের দিন
লিখতে লিখতে ফুরিয়ে আসুক
বেশ্যা পাড়ার হৈ চৈ শীতকাল
ফুরিয়ে আসুক জেটি ঘাটের মৃদুস্নান
আর আমাদের নিজস্ব ফাঁকিগুলি
নিয়তি জানুক
গোধূলির ভেজা আলোয়

আট

যেসব রাতে ঘোর তন্দ্রা
নেমে আসে ঘরে
বিষণ্ণ বক একাকী বসে থাকে
তোমার জ্বরের এপারে
পাল্লা ভাঙা চৌকাঠ পেড়িয়ে
ঘরময় মায়াফুল ছড়িয়ে দেয় কেউ
যন্ত্রণার ভিতর, নিঃসঙ্গ অন্ধকারের ভিতর
ভিজে ভিজে যায়

আমাদের সরল পরম্পরা

পেইন্টিং- লুবনা চর্যা

অভিষেক দত্ত


জন্ম ও বসবাস কলকাতার দমদম ক্যান্টনমেন্ট। ২০১৯ সালের বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে প্রথম কবিতার বই ‘জল রঙের সাঁকো’ ।

Share