বিষণ্ণতা একটা মুখের নাম

।। সোমনাথ ঘোষাল ।।

বিষণ্ণতা একটা মুখের নাম
বিপরীতে কাচে দেখা আকার
দূর থেকে আলোচনা করলে
জানা যায় মুখের কোনো অবয়ব নেই

উজবুক

১১

স্যাঁতস্যাঁতে ফসলের ওপর
শুয়ে আছি
ঠাণ্ডা দেহতে একমুঠো ধোঁয়া গন্ধ লেগে যাবে চৌকোনা
শনিবার আর কিছু রঙিন দাগ

মুহূর্ত কবেকার আদিম প্রণালী
কেঁচোদের বারোমাস একা হয়ে ওঠে এই দারুণ অক্ষরে

কবিতা সাড়া দেয় না
বয়স্ক আঙুলের ছাপ থেকে
পোশাকের গায়ে নদীজ্বর
আধভাঙা মানুষের দিন তুলে
মস্তিষ্কের কয়েকটা উল্লাস

কবি ডাকে
সাড়া দেয় জড়ানো
শৈশব মৃত্যু আর দূরত্ব

ভাঙে বিছানার মাছ জলহীন
আঁশের গতি
ফোঁটা ফোঁটা শবযান

১২

ল্যাম্পপোস্টের আলোটা একা
কেন জ্বলছে জানে না
ঘুমের জলচৌকিতে মাথা
রেখে পুরোনো স্বপ্ন দেখছে
শীতকাতুরে আমার জামাটা

ওর ছায়া পড়েছে অনেকটা
আলোর গায়ে দূরত্ব কমেছে
হাত ধরার কেউ নেই
ঘুমন্ত গলিতে কাকে ঘর চেনাবে

কেন জ্বলছে বৃষ্টি মাথায়!

বিছানা নেই এই মন খারাপের
সিনেমায় দৃশ্য শূন্য করে
চলে যাচ্ছে প্রতিটা ঘড়ি

আলোর মুখ ওল্টালে রাতের
প্রয়োজন হবে না একাকীত্বের
তবুও পাহারা দিচ্ছে জামাটা

কোনো ছায়াছবি ছাড়া

১৩

বিষণ্ণতা একটা মুখের নাম
বিপরীতে কাচে দেখা আকার
দূর থেকে আলোচনা করলে
জানা যায় মুখের কোনো অবয়ব নেই

একটা নিজস্ব রান্নার তালিকা অনুযায়ী
সাজিয়ে রাখছি তোমার মন খারাপ
পাথরভর্তি নদী নিয়ে রঙ গুলে
পাখিদের সমাবেশ
এটাই ছিল স্বপ্নের ম্যাগাজিনে

আঞ্চলিক ঘুমের জড়তা কাটিয়ে
ছায়া তুলে নিচ্ছে পোষা আঙুল
আমাদের কোনো দোকানঘর ছিল না
শব্দের হাততালি দিয়ে কবিতার জন্মদিন
দেখিনি

নুন পড়ে থাকে অবচেতনে
বালিশে বিষণ্ণস্বর লেগে থাকে
গুলে যায় প্রতিটা
বন্ধ আলো

১৪

রাত বাড়তেই চারপায়েরা
কালো টেলিফোনের মুখে
কানকোর মতন ছটফট করে
কেউ হয়তো আলোবৃত্ত ছুঁড়ে
মারছে ওদের লাশের গন্ধে

চারপা শোনে রাতের
তলায় কতখানি নৈশভোজ
আমার গন্তব্য স্থল থেকে
নৈরাজ্যের কর্মসূচি চাঁদ না হলে
বন্ধ জেটিতে মরাছায়া
কুড়িয়ে রাখছে চিৎকার

দূর থেকে ঘুমের কারবার শেষ
করে দাঁত ভাঙা স্পর্শ ছুঁয়েছে
বাদামি নখের ফসল
যেন স্বপ্নের জেলখানায় ওরা

আমার রিসিভারে চালান
হচ্ছে একে পর এক কাটাদৃশ্য
বাঁ পায়ে যেসব প্রজাপতিদের
মাছ ধরার ক্ষমতা ছিল

নিছক কোনো যান্ত্রিক শূন্যে

১৫

বাইরে জল পড়ছে তরল কিছু
ঘনত্ব রাতের সঙ্গে শব্দ তুলছে
অতীতের পোশাকী গানবাক্স
ঘ্রাণের মধ্যে যাদের বেঁচে থাকার কথা তারাও ভিজে
এঁটো কাঁটার নুনে স্বাদ পায়

কিছুদিন পর তরল শহর থেকে
রোদস্নান ছেড়ে
গল্পের শরীরে ফুঁ দেবে
শব্দের দোকান ফেরত মুখ

সেও হঠাৎ তরল হতে গিয়ে
অন্ধকার মাড়িয়ে মাড়িয়ে
কবিতার হাসপাতাল দেখবে

ছবি: শঙ্কর কর্মকার

সোমনাথ ঘোষাল

২০০২ সাল থেকে লেখালেখি করছেন। প্রথম বই ‘শহর হয়ে যাক অনুলেখা’ অভিযান পাবলিশার্স থেকে ২০০৯ এ প্রকাশিত হয়। এখনও অবধি বারোটি বই। তারমধ্যে দুটি উপন্যাস। দীর্ঘদিন সঙ্গীত জগতের সঙ্গে যুক্ত। দি আত্মন অডিও’র কর্ণধার। পাশাপাশি একটি তথ্যচিত্র ও দুটি শর্ট ফিল্ম বানিয়েছেন। বর্তমানে বাংলার লোকগান সংরক্ষণের কাজে যুক্ত।

Share