নগ্ন লাল্লেশ্বরী

।। রূপসা ।।

চোদ্দো শতকে লাল দেদের পথটি সহজ ছিল না। আজও নয়। ব্রাহ্মণবাড়ির মেয়ে স্বামীর ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন, এটাই প্রথমে মেনে নিতে পারেনি জনতা। তার পরে শুধু বেরিয়ে এলেন না, দীক্ষা নিয়ে শুধু গুরুগৃহে পড়ে রইলেন না, তিনি বেরিয়ে গেলেন নিজের খোঁজে। নিজেকে খুঁজতে। বা বলা ভালো, ঈশ্বরকে খুঁজতে। শুরু হল তাঁর একার যাত্রা। তিনি আর কারও সুরক্ষাকবচের মধ্যে রইলেন না। তিনি ঈশ্বরের ভরসায় বেরিয়ে পড়লেন, নিজের সংস্থান নিজে করলেন মাধুকরী করতে। শোনা যায়, লাল দেদ এক সময়ে নিজের শরীরের বস্ত্রটুকুও রাখতেন না। স্বভাবতই, যাকে এক্সেন্ট্রিক বলে, তেমন কোনো নারীকে দেখে ঢিল ছোঁড়া, তাকে অপমান করার কোনো অবকাশটুকুই তখন হাতছাড়া করেনি সমাজ। লাল দেদ বলছেন,ওরা আমাকে অপমান করে, আমার দিকে ঢিল ছোঁড়ে- তাতে কী যায় আসে! আমার কী যায় আসে। অপমানও গায়ে লাগে না, কেউ ফুলের মালা দিলেও গায়ে লাগে না!

নগ্ন লাল্লেশ্বরী

বাক। মানে বচন। এই বাক লাল দেদের। লাল্লা যোগেশ্বরী বা লাল্লেশ্বরী, লাল দেদ, লাল-আরিফা।

কে ঘুমে, কে জেগে
আশমানে কোন সরোবর
কোথা থেকে বর্ষে অমৃত
কোন অর্ঘ্য প্রিয় শিবের
কোন সেই অমোঘ শব্দ,
যার জন্য তুমি খুঁজছ ফকিরের পুঁথি

চোদ্দ শতকের কথা। ব্রাহ্মণকন্যা বেরিয়ে এলেন ঘর থেকে। স্বামীর ঘর ছেড়ে। বিবাহিত জীবনে সুখ ছিল না। সেই যে বেরিয়ে এলেন ঘর থেকে, তার পরে আর ফিরলেন না। দুনিয়াজোড়া ঘর হল তাঁর। সোলো ট্রাভেলার তিনি।

একমাত্র শিব ছাড়া কেউ নেই তাঁর।
শিবের খোঁজে বেরিয়েছে সেই নারী। বধূ শুয়েছিল পাশে, শিশুটিও ছিল- তবু সে দেখিল কোন ভূত!
কোন ভূতের দেখা পেয়ে ঘরের পাথরের শিবে মন মানল না তাঁর।
তিনি অমৃতের সন্ধানে বেরিয়েছেন। ঘরের মূর্তি ছেড়ে তিনি বেরিয়েছেন পথেঘাটে। তাঁর পথ নির্জন, গভীর।

কতই বা বয়স তখন তাঁর! মোটে চব্বিশ বা ছাব্বিশ।বেরিয়ে গেলেন। আর কী সাহস মেয়ের, দীক্ষা নিলেন সিদ্ধ শ্রীকান্তের কাছে। যাঁকে কাশ্মীরে সেদ বয়ু বলা হয়। আর তার পর তিনি শিখলেন ধীরে ধীরে, কী ভাবে চলতে হয় একা।

তাঁর পায়ে জুতো নেই, তাঁর সংসার নেই, অন্ন নেই। শুরু হল তাঁর মাধুকরী ভ্রমণ। এই ভাবেই চলতে লাগল।

তার পর একদিন, এ হেন শিষ্যা সারা দিন ঘুরে এলেন গুরুগৃহে। তথাকথিত অপবিত্র ছিলেন তিনি! গুরু বললেন, এ মন্দির থেকে দূরে যাও। শিব আছেন এখানে। তিনি হাসলেন। বললেন, শিব তো সর্বত্র। তারপর পরপর ঘুরতে লাগলেন এ ঘর ও ঘর। আর সর্বত্র লিঙ্গরূপে প্রকাশিত হলেন শিব।

প্রেমেরও লিঙ্গ যোনি হয়। ভগবদপ্রেমের। বলছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ। ঈশ্বরের সাথে রমণের কথা বলেছিলেন তিনি। আর চোদ্দ শতকে লাল দেদ কী বললেন? বললেন, আমি তাঁকে মন্দিরে খুঁজলাম, তীর্থে খুঁজলাম- পেলাম না। তারপর যখন নিজের সঙ্গে একা, তখন পেলাম, অন্ধকারে, আর আঁকড়ে ধরলাম তাঁকে।
বলছেন লাল দেদ- পাথরে কি শিব আছে? নেই। শিব সর্বত্র।

জ্ঞান শক্তি, ইচ্ছাশক্তি আর কর্ম শক্তি- এই তিন ধারায় শিব খুঁজে বেড়ান যাঁরা, তাঁরাই শৈব ত্রিকা ধারার মধ্যে থাকেন।
লাল দেদও ছিলেন শৈব ত্রিকা ধারার পথিক। পাথরে নয়, লিঙ্গযোনির শিবপ্রতীকপ্রতিমায় নয়, তিনি শিবকে পেলেন চিতপ্রকাশজ্যোতিতে। সত-চিদ-আনন্দ তাঁর পথ।

এই যে ত্রিকা ধারা, তাতে কী বলা হয়?
এই যে জ্ঞান, ইচ্ছা আর কর্ম- এই তিনটি ধারা দিয়ে তৈরি হচ্ছে দর্শন- সেই ত্রিধারার সাথে কেউ যুক্ত করতে পারেন, বুদ্ধের তিন দেহ। এটি সাধারণত যোগাচার। যেখানে পৃথিবী এই তিন দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।

আর এর শেষ প্রান্তে গিয়ে আমরা পাব শরীর আর পৃথিবী তথা গোটা জগতের সম্পর্ককে। যেখানে শরীর জগতবিচ্ছিন্ন কিছু নয়। শরীরের সঙ্গেই তার প্রতিনিয়ত বোঝাপড়া। তার একদিকে শিব, একদিকে জগত। শিব সেই অদ্বৈত পরম, যা প্রতিটি জগতে তথা জীবাত্মায় প্রকাশিত। জীবাত্মা তার প্রকৃত ধরণটি সম্পর্কে বিস্মৃত, অথচ নির্জ্ঞানে সে সেই পরমাত্মারই অংশ। এ বার জীবাত্মার সঙ্গে পরমাত্মার মিলন কোথায়- তার জন্য চাই ধ্যান। সেই ধ্যানের মধ্যে দিয়ে, শরীরের মারফতেই জীবাত্মার সঙ্গে মিলিত হয় পরমাত্মা- শব (UNCONCIOUS) এর চেতন ফেরে। সে নিজেই হয়ে ওঠে শিব। এতে জীবাত্মা বুঝতে পারে সেই পরমের লীলাকে। সে শিব দেখে সর্বত্র।

শিব, শৈব ত্রিকা ধারায় তিনিই পরম।
তিনি আর শুধুমাত্র মূর্তিবদ্ধ কোনও দেবতা নন। তিনি অদ্বৈত পরম।

কী বলছেন লাল দেদ?

নিজের মধ্যে গুটিয়ে দয়াল, লুকিয়ে আমার মাঝে
খুঁজি তোমায় খুঁজে না পাই পথে ও প্রবাসে
যখন পেলাম তোমার ছায়া নিজেরই অন্দরে
শিশুর মতো ছুট লাগালাম-
আজব খেলা খেলতে পেলাম
এখন আমি, এখন তুমি
তুমিই আমি, আমিই তুমি- এ কী অপার লীলে

এখন প্রশ্ন হল, হঠাত লাল দেদকে নিয়ে লিখছি কেন?

এক, লাল দেদ ঘরে শিবমূর্তির মধ্যে শিবকে খুঁজে পেলেন না, তিনি বেরিয়ে গেলেন। এবং শিবকে পেলেন সর্বত্র। শিবকে পেলেন নিজের ঘরে, ঘরের বাইরে, নিজের ভিতরে, নিজের বাইরে। আর তিনি বললেন এক অমোঘ কথা- লাজ করব কাকে

লাজ করার প্রশ্নে জানিয়ে রাখা যেতে পারে, চোদ্দো শতকে লাল দেদের পথটি সহজ ছিল না। আজও নয়। ব্রাহ্মণবাড়ির মেয়ে স্বামীর ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন, এটাই প্রথমে মেনে নিতে পারেনি জনতা। তার পরে শুধু বেরিয়ে এলেন না, দীক্ষা নিয়ে শুধু গুরুগৃহে পড়ে রইলেন না, তিনি বেরিয়ে গেলেন নিজের খোঁজে। নিজেকে খুঁজতে। বা বলা ভালো, ঈশ্বরকে খুঁজতে। শুরু হল তাঁর একার যাত্রা। তিনি আর কারও সুরক্ষাকবচের মধ্যে রইলেন না। তিনি ঈশ্বরের ভরসায় বেরিয়ে পড়লেন, নিজের সংস্থান নিজে করলেন মাধুকরী করতে। শোনা যায়, লাল দেদ এক সময়ে নিজের শরীরের বস্ত্রটুকুও রাখতেন না। স্বভাবতই, যাকে এক্সেন্ট্রিক বলে, তেমন কোনো নারীকে দেখে ঢিল ছোঁড়া, তাকে অপমান করার কোনো অবকাশটুকুই তখন হাতছাড়া করেনি সমাজ। লাল দেদ বলছেন,ওরা আমাকে অপমান করে, আমার দিকে ঢিল ছোঁড়ে- তাতে কী যায় আসে! আমার কী যায় আসে। অপমানও গায়ে লাগে না, কেউ ফুলের মালা দিলেও গায়ে লাগে না!

কোনো কিছুতেই কিছু যায় আসে না, তার।

আর তার গায়ে বসন না থাকার কারণে যখন অপমানিত হলেন তিনি, তাতেও তাঁর কিছু এসে গেল না। নগ্ন নারী চলে গেলেন সকলের চোখের সামনে দিয়ে, আর বললেন, লাজ করব কাকে! এখানে তো কোনো পুরুষ নেই!
এই ভাবে সদর্পে হেঁটে বেড়ানো এক নিঃসঙ্গ নারী- তিনি কতটা যোগিনী ছিলেন, কতটা সিদ্ধা ছিলেন- সে মূল্যায়ন করার ধৃষ্টতা আমার নেই, কিন্তু এ কথা সদর্পে বলা উচিত, তিনি একটা পথ খুলে দিয়েছিলেন।

সাধনা, ঈশ্বরপ্রাপ্তির সুযোগ যে পুরুষতান্ত্রিক ব্রাহ্মণ্যসমাজ মেয়েদের ও ব্রাহ্মণেতরদের দেয়নি, সেই জায়গাতেই বিদ্রোহ করলেন তিনি। দেখিয়ে দিলেন সাধনার পথ সবার।এটা তাঁকে নিয়ে লেখার দ্বিতীয় কারণ।

আর তৃতীয় কারণটা কী?

লাল দেদ থেকেই আরও বিকশিত কাশ্মীরের ঋষি ধারা। শৈব লাল দেদের সঙ্গে দেখা হয়েছিল পারস্যের সুফি কবি মীর সৈয়দ আলি হামদানির (রা)। তিনি পারস্য থেকে কাশ্মীরে এসেছিলেন। রাস্তা দিয়ে তখন হেঁটে যাচ্ছিলেন লাল আরিফা। পথে তাঁদের দেখা হয়। চোখাচোখি হয়। সেই সাক্ষাতে কী ছিল, আমাদের মতো সাধারণ মানুষ তা জানতে পারবে না। তবে কিংবদন্তী বলে, সেখানেই লাল দেদের সঙ্গে তাঁর প্রজ্ঞা বিনিময় হয়েছিল, শুধুমাত্র দৃষ্টিসন্নিপাতে।

লাল দেদ ও হামদানি দুজনেই ঈশ্বরের একত্বে বিশ্বাস করতেন। ইসলাম বলে, কোনো উপাস্য নেই আল্লাহ ছাড়া। তেমনই লাল দেদ। বিশ্বাস করতেন পরম ব্রহ্মে, পরম শিবে। তাঁর প্রভাবেই কি না বলা যায় না, পরবর্তীকালে ইসলাম গ্রহণ করেন লাল দেদ। তাঁর নাম হয় লাল আরিফা। সেই ধারায় তাঁর পীর ছিলেন সৈয়দ হুসেন সমনানি। লাল দেদ উচ্চারণ করেছিলেন, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।

কিন্তু সে যাই হোক না কেন, সংগঠিত ধর্মে কোনও দিনই বিশ্বাস রাখতে পারেননি লাল দেদ। তিনি তাঁর সাধনাকে নিয়ে গেছেন উচ্চতর পর্যায়ে। সে জন্য যে পথ দরকার হয়েছে, তাতে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন। কাশ্মীরের যে ঋষি ধারা, তাঁর অন্যতম ছিলেন নন্দ ঋষি বা শেখ নুরুদ্দিন নুরানি। নাম দেখেই বোঝা যায়, তাঁরা একাধারে সনাতনী নাম, অন্য দিকে আরবি নাম বহন করেন, যা তাঁদের বিশেষ যুক্তসাধনাকে প্রকাশ করে।

লাল দেদ থেকেই আরও বিকশিত কাশ্মীরের ঋষি ধারা। শৈব লাল দেদের সঙ্গে দেখা হয়েছিল পারস্যের সুফি কবি মীর সৈয়দ আলি হামদানির (রা)। তিনি পারস্য থেকে কাশ্মীরে এসেছিলেন। রাস্তা দিয়ে তখন হেঁটে যাচ্ছিলেন লাল আরিফা। পথে তাঁদের দেখা হয়। চোখাচোখি হয়। সেই সাক্ষাতে কী ছিল, আমাদের মতো সাধারণ মানুষ তা জানতে পারবে না। তবে কিংবদন্তী বলে, সেখানেই লাল দেদের সঙ্গে তাঁর প্রজ্ঞা বিনিময় হয়েছিল, শুধুমাত্র দৃষ্টিসন্নিপাতে।

সুফিদের মতো মাজার-দরগা যেমন এই ঋষি ধারার উপাসনাকারীদের অন্যতম একটা দিক, তেমনই তাঁদের মধ্যে শৈব সাধনা তথা পরম শিবের উপাসনাও লক্ষণীয়।
আর এই ঋষি ধারা কাশ্মীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈশিষ্ট্য। যাকে অনেকে কাশ্মীরিয়ত বলে আখ্যায়িত করেন।

লাল দেদের সাধনার এই দিকটি এই মুহূর্তে হয়তো সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। লাল দেদ যেখানে নিজেকে সংগঠিত ধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন করে, যুক্ত সাধনার মধ্য দিয়ে  পরমকে পাওয়ার চেষ্টা করেছেন, যেখানে তাঁর কাছে একেবারে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি কোনও পরিচয়বাদী প্রকল্প, সেখানে আশির দশকের পর থেকে বার বার চেষ্টা হয়েছে লাল দেদ বা লাল আরিফাকে ধর্মীয় পরিচয়ে বেঁধে ফেলার। তৈরি হয়েছে একমাত্র সুফি স্কুল বা একমাত্র একমাত্র শৈব স্কুল। প্রত্যেকেই লাল দেদকে নিজের বলে যেমন দাবি করেন, তেমনই প্রত্যেকেই লাল দেদকে তথাকথিত অপর ধারাটির সঙ্গে বিচ্ছিন্ন করে দেখানোর চেষ্টা করেন।

অথচ, কিংবদন্তী বলে, লাল দেদের মর্ত্য শরীরের আর খোঁজ মেলেনি। লাল দেদ না রেখে গেছেন তাঁর লেখা কোনও নথি, না রেখে গেছেন তাঁর মর্ত্যদেহের অংশটুকু। তিনি মর্ত্যপৃথিবীতে ছিলেন। তার পর সময় হলে স্রেফ উবে গেছেন। অথচ তাঁকে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের একাংশ, তাঁকে ইসলাম থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করেছেন, তেমনই ওয়াহাবি প্রভাবিত জনগোষ্ঠী তাঁকে শুধুমাত্র ইসলামী বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করে গেছেন। অথচ এর বিরুদ্ধেই ছিল লাল দেদের জেহাদ।

উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারতে যখন হরহর মহাদেব আর আল্লাহু আকবর রব নিয়ে উপমহাদেশে ঘটে গেছে বড়ছোট নানা দাঙ্গা, তখন আসুন আমরা কল্পনা করি সেই নগ্নিকাকে, যিনি হরহর মহাদেব বলে হেঁটে যাচ্ছেন স্বেদাক্ত শরীরে। তাঁর শরীরের লাবণ্য আর নেই। তাঁর সেই একার সফরে তিনি অকস্মাত, ধরে নেওয়া যাক না কেন, প্রেমেই পড়লেন এক ইরানি কবির, প্রলয় ঘটে গেল, মহাকাল প্রস্তরচ্যুত হলেন, আর আকাশজুড়ে রব উঠল আল্লাহু আকবর।

লাল দেদ ও সৈয়দ হুসেন সমনানি

ত্রিকা ধারার অনুগামী লাল দেদের হাতে কোনো ডমরু বা ত্রিশূল ছিল কি না জানা নেই। তবু ভাবতে ভালো লাগে পড়ন্ত বিকেলে সেই উলঙ্গিনী উন্মাদিনী তাঁর হাতে ত্রিশূল নিয়ে জানু পেতে পশ্চিমে বসেছেন। সূর্য তখন অস্তাচলে। তিনি আভূমি প্রণত। আকাশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে সামা। রব উঠেছে, আল্লাহ মহান…

প্রান্তিকেরও প্রান্তিক সেই নারীর হাতের ত্রিশূল, আর গুজরাটে মুসলমান মায়ের পেট চিরে বের করা ত্রিশূলের আগায় গাঁথা ভ্রূণের মানে এক নয়। উপমহাদেশ রাখতে পারেনি সেই চিতপ্রকাশজ্যোতি পরম ঈশ্বরকে, যে সত্যিই বলতে পারে হর হর মহাদেব, প্রত্যেকে শিব- এই অমোঘ উচ্চারণের অবকাশ আর নেই। তাই আজ দরকার আবারও লাল দেদকে- সেই নারীকে- দিল্লির দাঙ্গাবিধ্বস্ত রাজপথ দিয়ে যিনি হেঁটে যেতে পারবেন তাঁর প্রলয়বিষাণ বাজিয়ে, একা। তার আগে অবধি মুক্তি নেই।
আমরা কি লাল দেদের উত্তরসূরী হয়ে উঠতে পারব না!

রূপসা

লেখক, গবেষক, সাংবাদিক। জন্ম ১৯৮৭ সালের ৫ আগস্ট৷ এক সময়ে বিপ্লবী কমিউনিস্ট ধারার ছাত্র রাজনীতি ও শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন৷ পড়াশোনা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক সাহিত্যে৷ এমফিল-এর কাজ চটকল শ্রমিকদের মৌখিক ইতিহাস নিয়ে, স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গের ইতিহাস, আন্দোলনের ইতিহাস, সত্তার ইতিহাস। প্রিয় লেখক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস আর সুদানের তায়েব সালিহ।

Share