দরিয়া ব্যাকুল

।। রহিমা আফরোজ মুন্নী ।।

আমাদের টানে বালুকণা টানটান
আমাদের ঘামে জবজবে সৈকত
আমাদের আরামে দরিয়া ব্যাকুল
আমাদের সান্ত্বনায় সাত আসমান একাকার

আমাদের টানে জল

আপনি আর আমি
স্থির আর অচঞ্চল
আমি আর আপনি
উদ্দেশ্য আর বিধেয়
আপনি আর আমি
নির্ঝঞ্ঝাট আর একাগ্র
ধীরে চৌবন্দি
ধীরে ধীরে চৌবাচ্চাতে
কানায় কোনায় কানায়
ধীরে ধীরে পরিপাটি
ধীরে আমার গলাবন্ধ
কানায় আর কোনায় মুক্তার ছটা

আমি শুধু আমায়
ধীরে ধীরে চৌবাচ্চাতে
আপনি শুধু আপনায়
ধীরে ধীরে দশ আঙ্গুলওয়ালা
ধীরে আমার গলায় ছাপ
ধীরে ধীরে পরিপাটি মাপ
আমি আর আপনি
স্থির আর অচঞ্চল

আপনার আর আমার
ধীরে ধীরে গলছিল
ঠাণ্ডা আর অনড়
বরফি গড়ে বরফ
ঝুরি ঝুরি ঝুরিগুলো
ঝরছিল ফিরতি বিহীন
আমাদের হাত বেহাত
বরফিকাটায় কাঁটা আর কাঁটা
কাটো নয় কেটে দাও
তবুও আমরা চেটে চেটে নিলাম
স্বাদু আহা সাধু

আমি ডুবে বাঁচলাম


জন্ম সময়ের স্মৃতি

আমার ইচ্ছা হয় মায়ের চামড়ার বেড় ঘিরা যেমন মুচড়াইয়া শুইয়া থাকতাম তেমন কইরা শুই ফের। ফের আমারে জড়াইয়া থাকুক উষ্ণতা আর সুরক্ষার মিল ঝুলে’র ফ্লেক্সিবিলিটি। ছোট মাছের মতো ছোট জায়গাটায় খলবল কইরা কইরা আমি দিব্যি চালাইয়া নিতাম সম্ভব হইলে। সম্ভব হইলে আমি এখনও তেমনই শুইয়া রব, আরেকটা শরীর আমারে বেড় দিয়া ঘিরা রাখবে, মায়ের উষ্ণতার বোধে আমি নির্বিঘ্নে খলবলাবো।


অমৃত

সে তো একাকিনী
তবু কেন রিনিঝিনি?
যদি বা তাই
বেশ তো ছিনিমিনি
যদি বা তাইও
কথা কবে কে?

সে তো একাকিনী
দরবেশের নিস্পৃহতায়
সে কি যেনতেন?
তা কে অস্বীকারে?
কিন্তু কবে কারে
তা-ও স্বীকারে না।

আসমান একা
একাকার জমিন
সব তোলপাড়
দুন্দুমার, বেশুমার
তবুও কবে কারে?

রোজ রোজ
খোঁজ খোঁজ
খাপছাড়া আধমরা
জোড় বেজোড়, বেজোড় জোড়
হলেই বা কী করা
কবে তো কারে!

চোখ বোজা, বেশ আধা
তবুও খোঁজা, সে কি সোজা?
অত কী আর দূর
চোখ যতদূর?
হবার হলে হবে
কিন্তু সে-ও কথা না
কথা তো সেমতে
যদি বা কবে তো কারে?

না-হয় হলো পথও ধুলায়
কিন্তু নুলোর কি কুলায়?
সে যে একাকিনী
তবুও ছাড়ে করে একাকার
ছুঁয়ে ছুঁড়ে, ছুঁড়ে ছুঁয়ে
ছুটে ঝটপট, ছুটে ঝটকায়
কবেই কবে
কিন্তু কারে?
না আছে আকার
না আছে ইকার
বরাবর কেবল বিকার
বরাবর কেবল অবাকই

ঝামেলায় গলে ঢলে
ভিজা ভিজা পিচ
সেকি পিছল
ডাকে হাঁকে আয়
তায় আবার খাড়া রোদ
তায় আবার কড়া রোদ
মরার মরা ক’বার মরে?
কিন্তু কবে যদিবা
কারে কবে?
কত কবে?

সে তো একাকিনী
ভুলভালে তালবেতালে
ছুঁয়েছিল একবার
জানালা’র পর জানালা
সরিয়ে ছিল একবার
পর্দা’র পর পর্দা
যদি বা একবারই
যদি বা অতি ব্যবহারে
তারা যখন ফ্যাকাশে।


ছ্যাঃ

তুমি তো বাঁচবার জন্যই জন্মাইছ তাইলে মরে গিয়ে কেমনে বাঁচবা? আর হুড়াহুড়ি করো বা না-ই করলা ধরো; ঘটবে কিন্তু দুইটাই তোমার সাথে আর নাইলে একটাও ঘটবে না আর ঘটবেও মাত্র একবার একবার করে কিন্তু তুমি চাইতেছ মরে গিয়ে তারপর বাঁচতে? সেইটা আবার কেমনধারা?

বলতে চাও মুক্তি? কিসে তোমারে বাইন্ধা রাখছে?
অনেক অনেক কারণ? তার মানে তোমার জরুরতও অনেক অনেক। সেই জরুরত পর্যন্ত টিকতে তো হইবেই। কারণগুলা মাঝে মাঝে অকারণ লাগে? যখন লাগবে তখন তুমি না-হয় ঘুইরা গিয়া আবার কারণে গেলা। ধরো খেলাটাই এমন। তোমার দায়িত্ব খেলনাগুলা জায়গায় রাখা। হারাইতেছে ধীরে ধীরে? ক্ষুদ্র মন নিয়া বড় বড় চোর?

অবাক করলা! ক্ষুদ্রতা কি ধরবার বিষয়? একদম না। ক্ষুদ্র বইলাই তো মরার পরেও বাঁচার কথা টানলা!

আমাদের টানে জল-২

ওলো সই শোন
আমাদের টানে জল
যেই জলে জবাকুসুম
যেই জলে ঘনগর্জন
যেই জলে থিকথিক মউ
জলেতে মৌতাতে
আমি আর সে

ওলো সই কান মেলে শোন
আমাদের টানে বালুকণা টানটান
আমাদের ঘামে জবজবে সৈকত
আমাদের আরামে দরিয়া ব্যাকুল
আমাদের সান্ত্বনায় সাত আসমান একাকার

সই লো
একবার, শেষবার
দেখ চেয়ে
শামুকভাঙা বুক।

রহিমা আফরোজ মুন্নী

আমাদের টানে জল

কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক। জন্ম ২৬ এপ্রিল, ১৯৭৪, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায়। ইডেন কলেজ থেকে ইসলামিক ইতিহাসে এম এ। প্রথম কাব্যগ্রন্থ, ‘আলিলুয়েভার হারানো বাগান’ (২০১৪)। প্রকাশিত অন্যান্য কাব্যগ্রন্থ উড্ডীন নদীর গান’ (২০১৫), ‘দি নিউ রহিমা পদ্যবিতান’ (২০১৬), ‘মগজে ছাতা’ (২০২০)। উপন্যাস ‘কালো মানুষের কারনামা’ (২০১৮)।

Share