তবু ছায়া পরে আছে মেঘে মেঘে

।। তানিম জাবের ।।

পৃথিবীর তরমুজ ক্ষেতে— একা বসে আছি মাচাং পেতে
হাতে দারুচিনিগন্ধী মদ, মাথার উপর ছাতা নাই
তবু ছায়া পরে আছে মেঘে মেঘে—
এই যে ধূ-ধূ বালুচর সামনে, দূরে ঘাই খাওয়া নদী
সবই তো দূর হাইওয়েতে হাওয়ায়
কাঁপতে থাকা মরিচিকার মতো লাগে ;
দারুচিনিগন্ধী মদ খাই নাই আমি!

তবু ছায়া পরে আছে মেঘে মেঘে

শীতকাল

দ্রাবিড় বন ডুবতাছে তোমার নাকের নোলকে
কই তার আওয়াজ আসে!
ভাতঘুমের মতো গভীর আর আরামের
এই বিকাল তবু শেষ হইতেছে
নিঃশ্বাস টানার মতো সহজাত শব্দে
পৃথিবীর এই দিনগুলা তবু—
হেমন্ত শেষের পাতার মতো উজ্জল লাল কমলা হলুদ,
তবু কী নিদারুণ ঝইরা পড়তেই তার সুখ
আমি তোমার দুঃখ থিকা পাশ ফিরা শুইলে
এলাচের ঝোপ আরো দীর্ঘ হয়
যেন সব সম্ভাবনার গোরে কেউ ধূপগাছের চারা লাগাইলো
সব শরীর মনরে ঘুম পারায়ে রাখে
কোনো এক বিষণ্ণ শীতের প্রথম সকাল পর্যন্ত
লিখতে গিয়া দেখি—
—যেন এইসব সবই শীত আসার পূর্ব প্রস্তুতি,
যেমন সবার ভেতরে হেমন্ত ঘুম পারে শীতের সকাল দুপুর ঠাণ্ডা রাত অবধি।

খোঁজ

বনে জঙ্গলে খুঁজি, খুঁজি লৌহজংয়ের ঘাটে, সেয়ানা
মাতুব্বর টিয়া পাখির ঠোঁটে তুইলা নেয়া হলুদ খামের
ভিতরে লেখা —বিদেশ ভ্রমন, নারী সংযোগ, প্রেমে ব্যর্থতা,
বৃহস্পতি তুঙ্গে, উচ্চশিক্ষার নিম্মগামীতা, রাহুর গ্রাস,
ত্যারাবেকা হাতের রেখার নিচের উপর গমন বিষয়ক—
শতায়ু প্রাপ্তির দন্ডমানে অসম বিপরীতমুখীতা সংক্রান্ত
হিজিবিজিতে লেখা দাম্পত্য শান্তিতেও খুঁজি, খুঁজি
বটগাছের শিকড়ে, দীর্ঘজীবি পরগাছায়, মানুষের
কংকালের অলিতে গলিতে, পাগলের কাছে যাই কিছু
আছে তার অনুবাদের ট্রান্সলেশনে অল্প প্রকাশে বিস্তর
পাইছি ভাইবা গিয়া মারজুক শাহর মাজারেও খুঁজি।
সকল খোঁজার পরে দেখি যে— খোঁজার ভিতরেই আছে
শুধু, আর কোথাও নাই।

পতঙ্গের পেছনে আমি দৌড়াইতাম—

কিন্তু পতঙ্গ দৌড়াইতো আগুনের পেছনে।
আগুন দৌড়াইতো বাতাসের কারসাজিতে।
বাতাস দৌড়াইতো ঢেউয়ের পেছনে।
ঢেউ এমন দিকবিদিক যে—
বালিয়াড়িতে লুকাইতো, অথচ
বালিয়াড়ির এমন ফাঁকি যে
ঢেউকে ডেকে এনে গোপনে সমুদ্রে পাঠায়ে দিত।
ঢেউ শুধু আসে আর যায়,
হায় ঢেউ! ফসফরাসের ঢেউ
পতঙ্গের মতো উড়ে উড়ে
তুমি ঝিনুক এনে বালিয়াড়িরে দিলা!

পৃথিবীর তরমুজ ক্ষেত

পৃথিবীর তরমুজ ক্ষেতে— একা বসে আছি মাচাং পেতে
হাতে দারুচিনিগন্ধী মদ, মাথার উপর ছাতা নাই
তবু ছায়া পরে আছে মেঘে মেঘে—
এই যে ধূ-ধূ বালুচর সামনে, দূরে ঘাই খাওয়া নদী
সবই তো দূর হাইওয়েতে হাওয়ায়
কাঁপতে থাকা মরিচিকার মতো লাগে ;
দারুচিনিগন্ধী মদ খাই নাই আমি!
বসে গন্ধ শুঁকি আর কামড় বসাই এক ফালি তরমুজে-;
কারা যেন ধরছে ঝাকি জালে চাকা চিংড়ি
অদূরে জ্বেলেছে কে উনুন, তরমুজের সাদা অংশযোগে
সে কী চাকা চিংড়ি করবে ভুনা ভুনা!
তরমুজ ফুলের মৌ কোন মাছি নিয়ে গেছে
লালা মিশায়ে তার বাচ্চারে খাওয়াবে বলে।
পেছনে তাঁবু উড়ে গেছে দমকা বাতাসে,
হায় পৃথিবীর এই তরমুজ ক্ষেতে—
ঘুমায়ে যাবো জীবন উড়ায়ে নিজেরে ভালোবেসে।

ভিন-তারামণ্ডলী

তবে কি নক্ষত্র ভ্রমনের ক্লান্তি আমাদের আজো স্থবির করে রাখে!
তা না হলে নক্ষত্রের নিচে শুয়ে আমরা কী খুঁজি?
আমাদের পায়নি খুঁজে আজো যারা, রেখে গেছে আমাদের
এক নক্ষত্র মাঝে— এই ভেবে হয়তো—
কোনো এক ফাল্গুন কি চৈত্রে আসবে ফিরে—
আরো কিছু নক্ষত্র ঘুরে, এই উজ্জ্বল নীল নক্ষত্র নদীর পাশে
এই ভেবে থেকে গেছি আমরা— নক্ষত্র ভ্রমনের ক্লান্তি
ফুরায়ে গেলে, ততদিনে হয়তো আকাশবিভাজন দেখা হয়ে যাবে সারা
এই আশায় শুয়ে আছি নক্ষত্রের নিচে
আর কোনো উজ্জ্বল নক্ষত্রের দেখা না পেলে হয়তো
ফিরে আসবে এখানে—
কৃত্তিকা, অশ্বিনী, কাল্ব দিয়ে ঘিরে রাখা এই নীল নক্ষত্রের পারে
এইসব ভেবে কেটে গেছে কিছু আলোকবর্ষ।
হায়! নক্ষত্র তবু নক্ষত্রের দোষে হয়ে যায় ফিকে
নক্ষত্রের উপর পিঠ রেখে চেয়ে থাকা তবু অন্য নক্ষত্রের দিকে।

ছবি- লুবনা চর্যা


তানিম জাবের

কবি ও গল্পকার। জন্ম ১৬ নভেম্বর, নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার মজলিশপুর গ্রামে। বর্তমানে নিউ ইয়র্কে স্থায়ীভাবে বসবাসরত।

Share