‘ঝিনচ্যাক ছাড়া কিছু থাকবে না’

।। দেবর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায় ।।

নবারুণের সত্তরের স্বপ্নের আগুন পেট্রল দিয়ে নেভাতে চেয়েছিল প্রশাসন। তাতে ফল হয় উল্টো। চুল্লি বার্স্ট করে যায় হারবার্টের। সেই চুল্লির বারুদ ধীরে ধীরে শান্ত শিশ্নের মতো নুয়ে পড়ে লোকাল কমিটি হয়ে ৮০ ও ৯০ দশকজুড়ে। সোভিয়েত পতন হয়। এরপর, চায়ের দোকান উঠে দিকেদিকে গজায় স্পা। নাইটক্লাব আর হুক্কাবারে ছেয়ে যায় ইতরের দেশ। তরুণের স্বপ্নে নেমে আসে সানকিসড কাফেতে ম্যানিকুইন। যারা আন্দোলন চেয়েছিলেন, তারা হন মিসফিট। বন্দুকের মুখে বেধে যায় কনডোম-বহুতল-মল-গেটেড কমিউনিটি।


‘ঝিনচ্যাক ছাড়া কিছু থাকবে না’

কলকাতায় ‘উনিশ কুড়ি’ নামের একটা পত্রিকা প্রকাশিত হতো এককালে। তাতে, যুবক-যুবতীরা কীভাবে খাবে-জামা পড়বে-শোবে-বসবে-হাগবে তার তালিকা থাকত। কালচার ইন্ডাস্ট্রি তিলে তিলে এভাবে এমন একটা যৌবনকে শেপ করেছে, যে তারা আজ হাবা। বা বিজেপি। তারা বর কিংবা বউ কিংবা প্রেমিক/প্রেমিকাকে ‘বেবি’ বলে ডাকে। ডিলডো-প্রেমের কাব্য লেখে ফেসবুকে। তাদের জীবন বলতে, বস-বর-বউ-বয়ফ্রেন্ড/গার্লফ্রেন্ড আর ফেসবুক। ইয়াই!

গত ৩০-৪০ বছর ধরে সচেতন ভাবে কলকাতাকেন্দ্রিক পশ্চিমবঙ্গে একটা যুগপ্রজন্ম এভাবে ম্যানুফ্যাকচার করা হয়েছে। এরা কোনোদিন কমলকুমার বা আখরারুজ্জামান ইলিয়াসের নাম শুনবে না। হ্যাকিং-কে মহত শিল্প ভাববে। বিজন-ঋত্বিক এদের কাছে বোগাস। এদের জানতে দেওয়া হবে না, ধনঞ্জয় বৈরাগীর ‘নুনের পুতুল সাগরে’ বা সমরেশ বসুর ‘মহাকালের রথের ঘোড়’। সত্যিই এরা গাণ্ডু প্রজন্ম। মানে, এরা আমারই বন্ধুবান্ধব। আমারই শ্রেণি। যাদের স্ট্রাগেল ছাড়াই শিওর সাককেস। যারা ফেসবুকে খাপ বসিয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করে গোপন স্ক্রিনশট দিয়ে। আন্দোলন এদের কাছে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট। ব্যবসা এদের কাছে সুসভ্য চিটিংবাজি। আছে বলতে, মুর্খামি আর কিছুটা মুরাকামি। আর জাস্ট কলকাতা ছেড়ে কাটব-কাটব খেলা।

এদের দোষ না। এদের বাবা-মা মানে আমাদের কাকু কাকিমারা এভাবেই এদের তৈরি করেছে। শিখিয়েছে, এরা,মানে বাপ-মা” র এক সন্তানরা, আসলে প্রোভিডেন্ট ফান্ড। যাদের রিটার্ন দিতে হবে। জীবন দিয়ে। তাই পাশের বন্ধুকে পাশ কাটিয়ে স্কুলে ফার্স্ট হওয়া, অন্যের প্রেমিক কেড়ে নিয়ে প্রেমে ভেংচি কাটা, কলেজে ডজ-ড্রিবল করে হ্যান্ডুকে ধরে ২৪-এ বিয়ে, ২৬-এ প্রোমোশান, ৩০-এ পেনশান প্ল্যান! এদের দোষ কী! তারা তো হাজার বছরের ইতিহাসে পেদে দিয়ে আমি-আমি করবেই! সেল্ফি তুলে রোজ জানান দেবেই, আমি কিন্তু আছি বস, বাজারে!

সম্প্রতি, নবারুণকে নিয়ে দীর্ঘ কাজটা করতে গিয়ে দেখছিলাম, ভবানীপুর-ট্রাঙ্গুলার পার্ক-বিজয়গড়ের ফুটপাত গমগম করত তাঁদের বন্ধুদের আড্ডায়। গোলপার্কে সন্ধ্যা নামত নবান্নর রিহার্সালে। এর আগে সুমনকে নিয়ে কাজ করতে গিয়েও একাধিক বন্ধু বলেছেন, গড়িয়া-নাকতলার কত সন্ধ্যা চলে গেছে তাঁদের আড্ডায়, চায়ের মলিন দোকানে। এই গমগম, গনগন, জীবনের ওম, মানুষের ভিড়, মিছিল, আসলে একটা সভ্যতাকে সজীব রাখে। সচেতন রাখে যৌবন। শিয়ালদহ স্টেশনের মত। টাকাই সব না-এই বিশ্বাসে শান দেয়। ছোট করে বেঁচে থাকায় যে গ্রাঞ্জার, যে মূল্যবোধ অন্যকে সাহায্য করায়, দেশটাকে মা হিসেবে দেখায়, নিজের ঐতিহ্যের যে বিপুল ট্রেজারহাউস তাঁকে সম্মান করতে শেখায় এই একটা সাবকালচার, একটা ফ্রন্ট, ব্যতিক্রমী মানুষের একজোট হওয়া ছাড়া সভ্যতা বাঁচতে পারে না। আজ এই পোস্ট-প্যান্ডিমিক দুনিয়া তা নতুন করে দেখিয়ে দিলো। এখান থেকেই বিজন-বাদল-নবারুণ-সুবিমল পেরিয়ে আরও অনেককে নিয়ে আমরা ধারাবাহিক কাজ করে যাচ্ছি ও যাব। সেলিব্রিটিদের এড়িয়েই করব। কারণ মানুষের এই সত্যগুলি তাদের কথায় বা কথার ভাঁজে কখনোই বেরবে না। কারণ, তারা বহুদিন গত হয়েছেন।

সিনে অনেকদিন ফ্যাতাড়ুরা নেই, বোঝা যাচ্ছে। থাকলে তাও হাগাফাগা ছুঁড়ত উপর থেকে। লোকে জেনে গেছে, যতই বেয়াদপি করো, কিছুই ল্যান্ড করবে না..তাই মোদী ঢপ মারছে, মুক্তিযুদ্ধে ছিলেন দাবীতে। দিলীপ ঘোষ বলছেন, শিল্পীদের রগড়ে দেবেন। অর্ণব গোস্বামী ভুল বাংলায় গেস্টকে ডেকে চাটতে গিয়ে নিজেই চাট খাচ্ছেন অকারণ..যে সমাজে ফ্যাসি-বিরোধী লেখক-শিল্পী সংঘ ফাসিস্ত শক্তিকে লাথিয়ে বের করত সেখানেই কয়েক দশক পরে আজ আকাশে ভেসে থাকে অর্ণব গোস্বামী… আস্ত টালিগঞ্জ কবন্ধের মত লাইন দেয় বিজেপি শিবিরে..বুদ্ধিজীবীরা মানুষ খুনকে সাপোর্ট করে কবিতা লিখে জাস্টিফাই করে চ্যানেলে বসে… রুদ্রনীল ঘোষ বলে, দলে থেকে কাজ করতে পারছিলান না, তাই ফাসিস্ত হলাম..এ আর এমন কী… সেই সুরেই গলা মেলান দল-বদলানো বাকরাও..’একটু খুনি হলামই না হয়..এ আর এমনকি..মাসের শেষে কোটি টাকা খরচা/তার জন্য হবে না একটু চায়ে-পে-চর্চা?’ দেশভাগ শুনেছিলাম, এখন দেখছি দেশবিক্রি এভাবেই..

ফ্ল্যাশব্যাকে দশ বছর পেছোলাম। সুমন মুখোপাধ্যায় কাঙাল মালসাট নিয়ে নাটক করেছেন। মঞ্চে বারবার দেখা গেছে ফ্যাতাড়ুদের। উপন্যাস আর গল্পে তো যথেষ্ট দুর্গন্ধ তারা ছড়াচ্ছিলই। তাতে রেগে উঠছিল বিরক্ত বুদ্ধিজীবীরা। এত বাওয়াল পাকালে চলে? নব্বইয়ের মাঝামাঝি এক বিদগ্ধ সুশীল তো বলেইছিলেন, এ ভাষায় লেখা উপন্যাস থাকবে না! এরপর যখন সিনেমা আর গ্রাফিক নভেলেও তারা নেমে এলো, তখন হলো মহা-কিচাইন।

সিনে অনেকদিন ফ্যাতাড়ুরা নেই, বোঝা যাচ্ছে। থাকলে তাও হাগাফাগা ছুঁড়ত উপর থেকে। লোকে জেনে গেছে, যতই বেয়াদপি করো, কিছুই ল্যান্ড করবে না..তাই মোদী ঢপ মারছে, মুক্তিযুদ্ধে ছিলেন দাবীতে। দিলীপ ঘোষ বলছেন, শিল্পীদের রগড়ে দেবেন। অর্ণব গোস্বামী ভুল বাংলায় গেস্টকে ডেকে চাটতে গিয়ে নিজেই চাট খাচ্ছেন অকারণ..যে সমাজে ফ্যাসি-বিরোধী লেখক-শিল্পী সংঘ ফাসিস্ত শক্তিকে লাথিয়ে বের করত সেখানেই কয়েক দশক পরে আজ আকাশে ভেসে থাকে অর্ণব গোস্বামী… আস্ত টালিগঞ্জ কবন্ধের মত লাইন দেয় বিজেপি শিবিরে… বুদ্ধিজীবীরা মানুষ খুনকে সাপোর্ট করে কবিতা লিখে জাস্টিফাই করে চ্যানেলে বসে…

“গরিব চুতিয়ারা তো জন্মেছে মরতে…” কারণ, “ঝিনচ্যাক নয় যারা পোঁদে মাথা নোয়াবে”। নবারুণকে এ ছবির সংগীতে এভাবেই ধরেছিলেন কবীর। গ্রাফিক নভেলেটিও তৈরি হয়েছিল সিনেমার ইমেজ থেকেই। এক রকম সিনেমারই এক্সটেনশান। কিন্তু কখনওই সিনেমার মেডি-ইজি না। উপন্যাস আর সিনেমার মাঝে দাঁড়িয়েছিল এটি। পাঠকের সামনে আগাম বার্তা দিচ্ছিল এই চলমান চিত্রমালা। কেমন ভাবে উড়ছিল ফ্যাতাড়ুরা? বা, দণ্ডবায়সের ভূমিকায় কবীরের প্রোফাউন্ড উচ্চারণগুলি কেমন? বা, ভোদী-চোক্তার-ফ্যাতাড়ুরা কীভাবে রীতিমত যুদ্ধে লেগে পড়ল নুনুকামান নিয়ে? এটুকুই।

উত্তাল সময়ে ফর্মই হয়ে ওঠে কনটেন্ট। আর, কনটেন্টই ফর্ম। কথাটা গোদারের। অনেকটাই সে ঢঙেই এ নভেলের শুরুতে এসে ধরা দেয় ফ্যাতাড়ু-চোক্তার-ভোদি-দণ্ডবায়সরা। একদল সুপারফ্লুয়াস, সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়র ভাষায়, যারা বিজন ও ঋত্বিকের বমির দাগের উত্তরাধিকার বহন করছে গাঁজা পার্কের পাইস হোটেলে। নবারুণের সত্তরের স্বপ্নের আগুন পেট্রল দিয়ে নেভাতে চেয়েছিল প্রশাসন। তাতে ফল হয় উল্টো। চুল্লি বার্স্ট করে যায় হারবার্টের। সেই চুল্লির বারুদ ধীরে ধীরে শান্ত শিশ্নের মতো নুয়ে পড়ে লোকাল কমিটি হয়ে ৮০ ও ৯০ দশকজুড়ে। সোভিয়েত পতন হয়। এরপর, চায়ের দোকান উঠে দিকেদিকে গজায় স্পা। নাইটক্লাব আর হুক্কাবারে ছেয়ে যায় ইতরের দেশ। তরুণের স্বপ্নে নেমে আসে সানকিসড কাফেতে ম্যানিকুইন। যারা আন্দোলন চেয়েছিলেন, তারা হন মিসফিট। বন্দুকের মুখে বেধে যায় কনডোম-বহুতল-মল-গেটেড কমিউনিটি। জীবন মানে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে, হয়ে দাঁড়ায়, আমি-বর-বৌ-বেবি-বস-ফেসবুক। বর বৌকে , বৌ বরকে ডাকে থ্রি-কোয়ার্টার- বেবি, ইয়াই!

নবারুণে রক্তে মিশে যাচ্ছিল এই দ্রোহ ও পাপ। তাঁর কোষে-তন্তুতে-শিরায় শিরায় ছড়াচ্ছিল পেট্রল। বেবি কে-র আগেই তাই বিস্ফোরণ হয় ফ্যাতাড়ুদের। এরপর দীর্ঘ তরঙ্গের মতো ডিপ্রেশান কাটিয়ে উঠছিলেন নবারুণ ধীরে ধীরে। মিউচুয়াল ম্যান-ফোয়ারা-পাঁচুগোপাল-চিতামানুষ-মিথিল-মিমি-ট্রয়-আব্বাদের পর ফ্যাতাড়ুদের মধ্যে দিয়ে অনেক চোয়াল শক্ত রাগ বেরচ্ছিল নবারুণের। নাহলে স্টোভ বার্স্ট করে যেত। তার আগেই পায়ের নীচে ইস্ত্রি চেপে ধরছিলেন নানাভাবে নানা রকম প্রতিষ্ঠানের। সাউথ সিটির সামনে অপমানের পর যেমন হাতে তুলে নিয়েছিলেন পাথর। বা, সোভিয়েত দেশ অফিস উঠে যাওয়ায় কাজ হারানোর পর যেমন বলেছিলেন, ” লাথি মেরে সব ভেঙে দেব…”

উত্তাল সময়ে ফর্মই হয়ে ওঠে কনটেন্ট। আর, কনটেন্টই ফর্ম। কথাটা গোদারের। অনেকটাই সে ঢঙেই এ নভেলের শুরুতে এসে ধরা দেয় ফ্যাতাড়ু-চোক্তার-ভোদি-দণ্ডবায়সরা।

চোক্তার আর ফ্যাতাড়ুরা ঠিক এভাবেই আক্রমণ করে প্রশাসনকে। তাদের অস্ত্র নুনুকামান মাত্র। নবারুণের প্ল্যান ছিল লেখার আরেকটি উপন্যাস ফ্যাতাড়ুদের নিয়ে। তাতে, চোক্তার-ফ্যাতাড়ুদের সাথে মিলে যাবে মহাকালচক্রে বেবি কে। তার আগেই মারা যান তিনি। কিন্তু, পাণ্ডুলিপি পোড়ে না। বুলগাকভের প্রিয় লাইন নবারুণের। তাই ত্রৈলোক্যনাথের উত্তরাধিকার ফ্যাতাড়ুরা উড়ে বেড়ায় রাতের সার্কাসে। সে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকেন লুব্ধক কুকুরের দল আর অন্ধবেড়ালরা। গোঙানি আসে, “ফ্যাত ফ্যাত সাঁই সাঁই/ সোনি বা আকাই/কিছুই বুঝিনা মোরা ঝামেলা পাকাই..”

ডিপ্রেশান কাটিয়ে উঠছিলেন নবারুণ ধীরে ধীরে। মিউচুয়াল ম্যান-ফোয়ারা-পাঁচুগোপাল-চিতামানুষ-মিথিল-মিমি-ট্রয়-আব্বাদের পর ফ্যাতাড়ুদের মধ্যে দিয়ে অনেক চোয়াল শক্ত রাগ বেরচ্ছিল নবারুণের। নাহলে স্টোভ বার্স্ট করে যেত। তার আগেই পায়ের নীচে ইস্ত্রি চেপে ধরছিলেন নানাভাবে নানা রকম প্রতিষ্ঠানের। সাউথ সিটির সামনে অপমানের পর যেমন হাতে তুলে নিয়েছিলেন পাথর। বা, সোভিয়েত দেশ অফিস উঠে যাওয়ায় কাজ হারানোর পর যেমন বলেছিলেন, ” লাথি মেরে সব ভেঙে দেবো…”

এমনই এক ঝড়জলের দিনে, বছর ছয়েক আগে চুল্লিতে পুড়ে গেছিলেন নবারুণ। আমাদের অনেকেরই তারপর এলিয়েনেটেড লাগছিল অনেকদিন। ভেঙে গেছিল সাময়িক ফ্রন্ট। এলোমেলো হয়ে গেছিল মিছিল। বাতানুকূল স্থিতাবস্থা গিলে নিয়েছিল অনেককে। তারপর এলো কালো স্বৈরাচারী শাসক-করোনা-আমফান। মারা হল বর্ণবিদ্বেষের দোহাই দিয়ে ফ্লয়েডকে। দুনিয়াজুড়ে রাস্তায় নামলেন মানুষ। আবার। মিছিল। আবার। ফ্রন্ট। স্লোগান উঠল, নবারুণের কবিতা দিয়েই। আবার। ডানা ঝেড়ে উড়ে গেল ফ্যাতাড়ুরাও। পালাবার কোনও পথ নাই/ফ্যাত ফ্যাত সাঁই সাঁই.. দুনিয়ার সমস্ত আন্দোলনের মুখ হয়ে গেলেন নবারুণ সহসা। তাঁর আরাধ্য ঘটকের মতোই সবকিছু ছাপিয়ে চলে গেলেন আন্তর্জাতিক পরিসরে। অনুবাদ হতে থাকলেন ইউরোপ আমেরিকায়। ক্রমশ। ঈশ্বরের বরপুত্রদের সাথেই।

রাগ বেরচ্ছিল নবারুণের। নাহলে স্টোভ বার্স্ট করে যেত। তার আগেই পায়ের নীচে ইস্ত্রি চেপে ধরছিলেন নানাভাবে নানা রকম প্রতিষ্ঠানের। সাউথ সিটির সামনে অপমানের পর যেমন হাতে তুলে নিয়েছিলেন পাথর। বা, সোভিয়েত দেশ অফিস উঠে যাওয়ায় কাজ হারানোর পর যেমন বলেছিলেন, ” লাথি মেরে সব ভেঙে দেবো…”

আমরা যারা গত দশ বছরে যৌবনের দিনগুলি কাটিয়েছি, যাদের সামনে নন্দীগ্রামের আন্দোলন ছিল, পিছনে ছিল আদর্শবিহীন সাউথসিটি, যারা ইতিহাসবঞ্চিত হোয়াটসঅ্যাপ-ফেসবুকের ধাক্কা প্রথম খেয়েছিল, যারা ডিপ্রেসড আর সাইকটিক একটা প্রজন্ম, বামপন্থার পরাজয় দেখল যারা, এনালগ গিয়ে ডিজিটালের আসা দেখল, দেখল কি দ্রুত বদলে যেতে স্মার্টফোন-হাজার এপ-ডিজিটালসমাজ-ভিডিওগেম ছেলেমেয়ে-ঈশ্বরযৌনতা তাঁদের আইকন ছিলেন নবারুণ। আজ মেনে নিতে দ্বিধা নেই। কারণ শুধু এ জন্যে না তিনি খিস্তি লেখেন। এ জন্যেও কারণ তাঁর কমান্ড। তাঁর রাজনীতি-আধ্যাত্মিকতা-সাংবাদিকতা-সাহিত্য-পড়াশোনা-ইতিহাস ও শহর। আর অন্তর্ঘাত। এই সবটা আমাদের দিত ইতিহাসের আশ্রয়। বলত, বোকা বুড়ো নবারুণ পাহাড় ভাঙছেন। একদিন রাস্তা হবে। হবেই। ডিনামাইট ফাটবে। কবে কীভাবে ফাটবে, তা জানতে এখনও বাকি আছে..আর যেদিন ফাটবে, সেদিন দশ দিন না, দশ হাজার দিন ধরে দুনিয়া কাঁপাবে কমিউনিস্টরা…

প্রচ্ছদের কোলাজ: অতনু সিংহ
ছবি: ইন্টারনেট

দেবর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায়

সাংবাদিক। নিউ মিডিয়া কর্মী। জন্ম ১৯৮৮। পড়াশুনা: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্যে। লেখক।

Share