গোরক্ষ শবদি (গোরখ সবদি)

।। অনুবাদ: অভিষেক ঘোষ ।।

( গোরক্ষনাথের পদ/কালাম/কবিতা। ইহাই গোরক্ষ শবদি। স্বয়ং গোরক্ষনাথের হাতে এই কাব্যধারা তৈরি হয়েছিল। মনে করা হয় গোরক্ষ সম্প্রদায় গোরক্ষনাথের পরবর্তী সময়েও গোরক্ষ উবাচগুলিকে ভিত্তি করে গোরক্ষ শবদি রচনা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। রচনা অর্থে পুঁথি-নিবদ্ধ অক্ষরের সময়কাল হয়তো অনেক পরে, মূলত মুখনিঃসৃত গুরুর বাণীই এই ধরণের কাব্য পরম্পরার ভিত্তি। গোরক্ষ শবদির অনুবাদ পাঠ করার পাশাপাশি এই অনুবাদের ভূমিকা হিসাবে অনুবাদকের নিজের কলমে লেখা মৌলিক গদ্য ‘নাথপন্থা ও গোরক্ষ-শবদি’ পড়ুন। )

গগনমণ্ডলে এক উল্টোমুখী কুয়া
তাহে আছে অমৃতের বাসা।
গুরু আছে যার সেই ভরে ভরে খায়
গুরুহীন মরে পিপাসায়।।


অস্তি নয় শূন্য নয়
সে অগম অগোচর।
গগনশীর্ষে এক বালক কথা বলে
কী নাম রাখিবে তার।।

বসতি ন সূন্যঁ সূন্যঁ ন বসতি
অগমঅগোচর এয়সা
গগনসিপরমহি বালক বোলৈ
তাকা নাবঁ ধরহুগে কৈসা।।

অদেখা দেখিবে, দেখে বিচারিবে,
অ-দৃষ্টি রাখিবে চিতে,
পাতাল গঙ্গা ব্রহ্মরন্ধ্রে তুলিবে
বিমল জল পান করে নিতে।।

অদেখি দেখিবা দেখি বিচারিবা
অদিসিটি রাখিবা চীয়া।
পাতালকি গঙ্গা ব্রহ্মঁড চড়াইবা
তাঁহা বিমল বিমল জল পীয়া।।

এখানেই আছে, এখানে গোপন,
রচিত হয়েছে তিনটি ভুবন
সদাই সঙ্গে সঙ্গে রয়,
তারই কারণে অনন্ত সিদ্ধ যোগেশ্বর হয়।।

ইহাঁহি আছৈ ইহাঁহি অলোপ
ইহাঁহি রচিলৈ তিনি ত্রিলোক
আছৈ সঁগৈ রহৈ জুবা
তা কারণি অনন্তসিধা জাগেশ্বর হুয়া।।

বেদ কেতাব আর আখ্যানবাণী
সকলি তার আবরণ।
গগনমন্ডলে শব্দ প্রকাশে
বোঝো এ অলখবিজ্ঞান।।

বেদ কতেব না খানি বাণী
সব টংকি তলি আনি।
গগন সিপর মহি সবদ প্রকাশা
তহ বুঝৈঁ অলখবিনাঁনী।।

অলখবিজ্ঞানের দুইটি প্রদীপ
ত্রিভুবনে ব্যাপ্ত এক জ্যোতি,
এরূপ বিচার করে ত্রিভুবন খুঁজে
বেছে নাও মানিকমোতি।।

অলখ বিনাঁনী দোহ দীপক
রচিলৈ তীন ভবন এক জোতি।
তাস বিচারত ত্রিভুবন সুঝৈ
চুনিলৌ মাঁনিক মোতি।।

বেদে বা শাস্ত্রে কোরআন কেতাবে
কোথাও ব্যাখ্যা নাই
সে পদ জানে কেবল যোগী
বাকিরা ঘোরে ধাঁধায়।।

বেদে ন সাস্ত্রে কতেবে ন কুরানে
পুস্তকে ন বঁচ্যা জাই।
তে পদ জানা বিরলা জোগী
অউর দুনি সব ধন্ধে লাই।।

হাসিবে খেলিবে রহিবে রঙ্গে
কাম ক্রোধের না করিবে সঙ্গ।
হাসিবে খেলিবে গাইবে গীত
দৃঢ় করে রেখে‌ আপন চীত।।

হসিবা খেলিবা রহিবা রংগ
কাঁম ক্রোধ ন করিবা সংগ
হসিবা খেলিবা গাইবা গীত
দিট করি রাখি আপন চীত।।

হাসিবে খেলিবে করিবে ধ্যান
সদা আলাপিবে ব্রহ্মজ্ঞান।
হাসে খেলে, মনে ধরেনা ভঙ্গ
সে রয় নিশ্চল নাথের সঙ্গ।।

হসিবা খেলিবা ধরিবা ধ্যান
অহনিসি কথিবা ব্রহ্মগিয়াঁন।
হসৈ খেলৈ ন করৈ মন ভংগ
তে নিহচল সদা নাথকে সংগ।।

মহম্মদ নাম ধরে চেঁচিও না কাজী
মহম্মদের ভেদ বিষম বিচার।
লোহা বা ইস্পাতে তৈরি ছিলনা
তাহার হাতের তলোয়ার।।

মহমঁদ মহমঁদ ন করি কাজী
মহমঁদ কা বিসম বিচার।
মহমঁদ হাথি করদ জে হোতি
লোহে ঘড়ী ন সারঁ।।

১০

শব্দে মারে শব্দে জ্বালায়
মহম্মদ হয় এমন পীর।
তোমার সে বল নাই হে কাজী
এই ভ্রমেতে ভুলো না আর।

সবদৈঁ মারি সবদঁ জিলাই
এসা মহমঁদ পীরঁ।
তাকৈ ভরমি ন ভুলৌ কাজী
সো বল নহীঁ সরীরঁ।।

১১

নাথ নাম জপেও জগৎ বাঁধা
গোরখ জপেও গুপ্ত
কলমার গুরু মহম্মদ হয়
তিনিও হয়েছেন সুপ্ত।।

নাথ কহন্তা সব জগ নাথ্যা
গোরখ কহন্তা গোই।
কলমাকা গুর মহমঁদ হোতা
পহলৈ মুবা সোই।।

১২

সারাৎসার রয় গহন গভীর
গগন উছলে নাদ
মানিক যে পায়, পেয়ে সে লুকায়
মিথ্যা বাদ বিবাদ।।

সারমসারঁ গহর গঁভীর
গগন উছলিয়া নাদ।
মানিক পায়া ফেরি লুকায়া
ঝুটা বাদ বিবাদঁ।।

১৩

কেউ বা বিবাদী কেউ বাদী
বিবাদ করেনা যারা যোগী।
আটষট্টি তীর্থের জল সাগরেই মেশে
জেনে যোগী চলে গুরুমুখী।।

কোই বাদী কোই বিবাদী
জোগী কৌঁ বাদ ন করনাঁ।
অটসটি তীরথ সমঁধি সমাবৈ
য়ুঁ জোগী কৌঁ গুরমুখি জরনাঁ।।।

১৪

জন্মে হিন্দু যাপনে যোগী
বুদ্ধিতে হয় মুসলমান
ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিবের মান্য
কাজী মোল্লারা এ পথ চেন।।

উতপত হিঁদু জরনাঁ জোগী
অকলিপরি মুসলমাঁনী।
তে রাহ চীন্হো হো কাজীমুল্লাঁ
ব্রহ্মা বিসনু মহাদেব মানী।।।

১৫

মানো হে শব্দ ঘুচবে দ্বন্দ্ব
ভর্তৃহরী রাজা ও গোপীচন্দ্র
পরিচয় পেয়ে হল নির্দ্বন্দ্ব
যোগী হয়ে পেল পরমানন্দ।।

মান্যোঁ সবদ চুকায়া দন্দ,
নিহচৈ রাজা ভরথরি পরচৈ গোপীচঁদ।
নিহচৈ নরবৈ ভয়ে নিরদঁদ
পরচৈ জোগী পরমানঁদ।।।

১৬

অহর্নিশি উন্মনা রয়
গম্য ছেড়ে অগম্য কয়
ছেড়ে সর্ব আশ রয় যে নিরাশ
ব্রহ্মা কয় হব তাহার দাস।।

অহনিসি মনলৈ উনমন রহৈ
গম কি ছাঁড়ি অগম কী কহৈ।
ছোড়ৈ আসা রহৈ নিরাস
কহৈ ব্রহ্মা হুঁ তাকা দাস।।

১৭

নিম্নগতিকে উর্ধ্বে ধরে
যোগী হয়ে কাম দগ্ধ করে।
ছাড়ে আলিঙ্গন কাটে মায়ায়
বিষ্ণুও তার চরণ ধোয়।।

অরধৈ জাতা উরধৈ ধরৈ
কাম দগধ জে জোগী করৈ।
তজৈ আল্যাঁগন কাটৈ মায়া
তাকা বিসনু পখালৈ পায়া।।।

১৮

জপো হে অজপায় মনকে শূন্যে ধর
পাঁচ ইন্দ্রিয় হয় তাদের নিগ্রহ কর।
আহুতি দাও কায়া ব্রহ্ম অগ্নিতে।
স্বয়ং শিব চায় তার চরণ পেতে।।

অজপা জপৈ সুনি মন ধরৈ
পাঁচৌ ইঁদ্রী নিগ্রহ করৈ
ব্রহ্ম অগনি মৈ হোমৈ কায়া
তাস মহাদেব বঁদৈ পায়া।।

১৯

ধন ও যৌবনের করেনা আশ
চিত্ত না রয় কামিনীর পাশ
নাদবিন্দু রয় দেহের ঘরে
পার্বতী তার সেবা করে।।

ধন জোবন কী করৈ ন আস
চিত্ত ন রাখৈ কাঁমনি পাস
নাদ বিঁদ জাকৈ ঘটি জরৈ
তাকি সেবা পারবতী করৈ।।।

২০

বাল্যে যৌবনে যে হয় ধীর
সময় অসময়ে সত্যে স্থির।
স্ফুর্তি ভোজনে অল্পাহার
নাথ কহে সেই কায়া আমার।।

বালৈ জোবনি জে নর জতী
কাল দুকালাঁ তে নর সতী
ফুরতৈ ভোজন অলপ আহারী
নাথ কহৈ সো কায়া হমারী।।।

২১

শব্দই তালা হয় শব্দই চাবি
শব্দে শব্দেরে জাগায়
শব্দেই শব্দের ঘটে পরিচয়
শব্দ শব্দে মিশে যায়।।

সবদহি তালা সবদহি কুঁচী
সবদহি সবদ জগায়া
সবদহি সবদস্যুঁ পরচা হুয়া
সবদহি সবদ সমায়া।।

২২

মার্গহীন চলা, অগ্নিহীন জ্বলা
হাওয়ায় মেটানো তেষ্টা।।
স্বসংবেদ গুরু গোরখনাথ কয়
পণ্ডিত করো চেষ্টা।।

পঁথ বিন চলিবা অগনি বিন জলিবা
অনিল তৃখা জহটিয়া
সসংবেদ শ্রী (গুর) গোরখ (নাথ) কহিয়া
বুঝিলৌঁ পঁডিত পঢ়িয়া।।

২৩

গগনমণ্ডলে এক উল্টোমুখী কুয়া
তাহে আছে অমৃতের বাসা।
গুরু আছে যার সেই ভরে ভরে খায়
গুরুহীন মরে পিপাসায়।।

গগন মঁডল মৈ উঁধা কুবা
তঁহা অঁমৃত কা বাসা।
সগুরা হোই সু ভরিভরি পিবৈ
নিগুরা জাই পিয়াসা।।

২৪

আকাশে মেশেনা, আগুনে পোড়েনা,
হাওয়ায় ওড়েনা, জলেতে ডুবেনা সে
পৃথিবীর ভারে ভাঙেনা কখনো
বললে বুঝবে কে।।

গগনে ন গোপঁত তেজে ন সোখঁত
পবনে ন পেলঁত বাই।
মহীভারে ন ভাঁজত উদকে ন ডুবঁত
কহৌ তো কী পতিয়াই।।।

২৫

সুবাসে জগৎ সুবাসিত হয়
মধুর সকল স্বাদ
সত্য বলি তবে সৎগুরু মানো
যদি রূপ দেখবার সাধ।।

বাস সহেতী সব জগ বাস্যা
স্বাদ সহেতা মীঠা।
সাচ কহুঁ তো সতগুর মাঁনৈ
রূপ সহেতা দীঠা।।

২৬

মরো হে যোগী মরো
মধুর এই মরণ।
যেমন মরণে গোরক্ষনাথ
পেয়েছে দর্শন।।

মরৌ বে জোগী মরৌ
মরনা হৈ মীঠা।
তিস মরনি মরৌ জিস মরনি
গোরখ মরি দীঠা।।।

২৭

বাচাল না হবে, সাবধানে রবে
পা ফেলিবে দেখে শুনে।
গর্ব না করিবে, সহজ হইবে
গোরক্ষরায় ভণে।।

ইবকি ন বোলিবা উবকি ন চালিবা
ধীরে ধরিবা পাওঁ।
গরব ন করিবা সহজৈ রহিবা
ভনত গোরখরাও।।

২৮

ভরা কলস অচঞ্চল
আধাকলস ছলছলায়
সিদ্ধেসিদ্ধে মিললে অবধূ
কথার কিছু অর্থ হয়।।

ভরন্যা তে ধীরঁ
ভলভলঁতি আধা
সিধে সিধ মিল্যারে অবধূ
বোল্যা অরু লাধা।।

২৯

নাথ কহে তুমি শোন অবধূত
চিত্তে রাখ দৃঢ় করি।
কাম ক্রোধ অহংকার কে মারো
তবেই হবে দেশান্তরি।।

নাথ কহৈ তুম সুনহুরে অবধু
দীট করি রাখহু চীয়া।
কাম ক্রোধ অহংকার নিবারৌ
তৌ সবৈ দিসঁতর কীয়া।।

৩০

বনে গেলে ধরে ক্ষুধার পাশ
নগরে নগরে জড়ায় কামিনী মায়া।
বেশি খেলে হয় বিন্দু নাশ
কেমনে রাখিব জল বিন্দুর কায়া।।

স্বামী বনখঁডি জাওঁতো খুধ্যা ব্যাপৈ
নগ্রী জাওঁ তৌ মায়া।
ভরিভরি খাওঁত বিঁদ বিয়াপৈ
কৌঁ সীঝতি জল ব্যঁদ কী কায়া।।।

৩১

অতিরিক্ত না খাইবে, অনাহারে না রইবে
দিবানিশি কর তুমি ব্রহ্মঅগ্নি সেবা।
হটকারী না হইবে, আলস্য না করিবে
কহেন গোরক্ষনাথদেব।।

ধায়ে ন খাইবা ভুখে ন মরিবা
অহনিসি লেবা ব্রহ্ম অগনিকা ভেবঁ।
হট ন করিবা পড়য়া ন রহিবা
য়্যুঁ বোল্যা গোরখদেব।।

৩২

অল্প কথা বলে অল্প খায়
তার দেহে বায়ু সমাহিত হয়।
গগনমণ্ডলে অনাহত বাজে
পিণ্ডপাত হলে সৎগুরু লাজে।।

থোড়া বোলে থোড়া খায়
তিস ঘটি পবনা রহে সমায়।
গগন মন্ডল মে অনহদ বাজে
পৈন্ড পড়ে তো সদগুরু লাজৈ।।

৩৩

যদি হও অল্পাহারী আর নিদ্রাত্যাগী
অবধূ্ত, কখনো হবে না তুমি রোগী।
ছ’মাস অন্তর তুমি কায়া পাল্টাও
যা করে বিরলে কোনো যোগী।।

অবধূ আহার তৌড়ৌ নিদ্রা মোড়ৌ
কবহু ন হোইগা রোগী।
ছটে ছ মাসৈ কায়া পলটিবা
জ্যু কো কো বিরলা বিজোগী।।

৩৪

দেবকলা হতে সংযত হবে
ভূতকলা করিবে আহার।
মন ও পবন যোগে উন্মনি ধরিবে
সেই যোগী পাবে তত্বসার।।

দেবকলা তে সংজম রহিবা
ভূতকলা আহারঁ।
মন পবন লৈ উনমনি ধরিবা
তে জোগী তত সারঁ।।

৩৫

ঘুমের ঘোরে গ্রাস করে কাল
খাওয়ার সময় চোর।
মৈথুনে গ্রাস করে জরা
অধঃকে উর্ধে ধর।।

অবধূ নিদ্রাকে ঘরি কাল জঁজাল
আহারকে ঘরি চোর।
মৈথুনকে ঘরি জুরা গরাসে
অরধ-উরধ লৈ জোর।।

৩৬

অতি আহারে ইন্দ্রিয় বল বাড়ে
নাশে জ্ঞান তার চিত্ত কামেতে ধরে।
বাড়ায় নিদ্রা আবরণ করে কাল
তাহার হৃদয়ে সদা থাকে জঞ্জাল।।

অতি অহার য়িঁন্দ্রি বল করৈ
নাসৈ গ্যাঁন মৈথুন চিত ধরৈ।
ব্যাপৈ নিদ্রা ঝঁপৈ কাল
তাকে হিরদৈ সদা জঞ্জাল।।

৩৭

প্রতি ঘটে ঘটে গোরখ বীজ বুনে যায়
ফসলে ফলন্ত হলে সে আমার হয়।।
প্রতি ঘটে ঘটে গোরখ শোনায় কাহিনী
কাঁচা মাটির ভান্ডে ধরা নাহি যায় পানি।।

ঘটি ঘটি গোরখ বাহী ক্যারী
জো নিপজে সো হোই হমারী।
ঘটি ঘটি গোরখ কহৈঁ কহাঁনী
কাচৈঁ ভাডৈঁ রহে ন পাণী।।

৩৮

নিঃশব্দে গোরখ প্রতি ঘটে আসে যায়
কোন ঘট জাগে আর কেউবা ঘুমায়
ঘটে ঘটে গোরক্ষ ঘটে ঘটে মীন
আপনার পরিচয় গুরুমুখে চিন।।

ঘটি ঘটি গোরখ ফিরৈ নিরূতা
কো ঘট জাগে কো ঘট সুতা।
ঘটি ঘটি গোরখ ঘটি ঘটি মীন
আপা পরচৈ গুরমুখি চীন্হ।।

অভিষেক রায়

স্বাধীন গবেষক, কবি, যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পী। বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলায়।

Share