একুশের বই

কোভিড-১৯-এর কারণে এ বছর ফেব্রুয়ারির বদলে মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে থেকে শুরু হয়েছে ঢাকার একুশের বইমেলা। এই উপলক্ষে ‘প্রতিপক্ষ’ পত্রিকায় বেশ কিছু বইয়ের তথ্য পাঠকের সামনে আমরা ‘বই পরিচিতি’ বিভাগে তুলে ধরছি। প্রথম পর্বে বইপত্রের সঙ্গে পাঠককে পরিচয় করাচ্ছেন সুপ্রভা জুঁই

OSHO: আত্মপ্রভ্রমণ ও অন্যান্য

অনুবাদ: তোরিফা নাজমিনা মণি

ওশো’র ‘আত্মপরিভ্রমণ’, ‘ওশো এবং রুমি’, ‘পথের প্রদীপ’ এবং শ্রী রমণ মহর্ষির ‘আমি কে?’- এই চারটি বইয়ের সংলকলন হলো রোদেলা প্রকাশনীর এই বইটি। অনুবাদ: তোরিফা নাজমিনা মণি

বইয়ের ফ্ল্যাপের ভাষ্য:
কোনো মানুষ ঈশ্বর অনুসন্ধান করতে পারে না কারণ এটা করার তার সামর্থ্য নাই। কিন্তু যখন কেউ নিজের অহমকে নিহি করার জন্য প্রস্তুত হয়েছে, যখন কেউ না হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছে, তখন নিঃসন্দেহে ঈশ্বরই তাঁকে খুঁজে নেবেন। কেবল ঈশ্বরই মানুষের খোঁজ করতে পারেন, মানুষ ঈশ্বরের খোঁজ করতে পারে না। কারণ অনুসন্ধানেও অহম বিরাজ করেঃ ‘‘আমি খোঁজ করছি, আমাকে ঈশ্বরের সংযোগ পেতে হবে; আমি সম্পদ অর্জন করেছি; আমি সংসদ সদস্য পদ পেয়েছি; আমি একটা বড় বাড়ির মালিক’’- এখন শেষ লক্ষ্যে পৌঁছানো বাকি-’’আমি ঈশ্বরকেও পেতে চাই। ঈশ্বর পাওয়ার মর্যাদাকে আমি কিভাবে এড়িয়ে যেতে পারি? সেটাই হবে আমার চূড়ান্ত বিজয়। আমি অবশ্যই এই বিজয় অর্জন করবো।’’ এটা সেই তীব্র অহমেরই প্রচারণা, জেদ এবং অনুসন্ধান। ধার্মিক ব্যক্তি হলেন সেই যিনি তার আমি’র খোঁজ করেন-এবং যত তিনি খুঁজতে থাকেন ততই তিনি দেখতে পান যে সেখানে আদৌ কো্নো আমি নেই। এবং যেদিন সেখানে আর কোন আমি থাকে না, সেদিনই তার জন্য গুপ্ত প্রেমের দরজা খুলে যায়।

প্রকাশনী: রোদেলা
প্রচ্ছদ: সুপ্রভা জুঁই


আমি কি নারীবাদী

লেখক: ফাতেমা সুলতানা শুভ্রা

বইয়ের ভূমিকায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক বখতিয়ার আহমেদ লিখছেন,

‘আমি কী নারীবাদী’ ফাতেমা সুলতানা শুভ্রার সপ্রশ্ন আত্মানুভ্রমণের আখ্যান।
বইতে গ্রন্থিত শুভ্রার ‘আত্ম’টি একাধারে নারী ও নৃবিজ্ঞানী। প্রথম প্রাত্যহিক নারীসত্তা পেশাদার গবেষকের দ্বিতীয় সত্তাটি ব্যবচ্ছেদ করে শুভ্রার বিদ্যাগত বিচরণের বাস্তবে। ফলে এই আখ্যান অস্তিত্ববোধ আর সমাজ বাস্তবের বিবরণে জারিত এক নতুন পাঠ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি দাঁড় করায় আমাদের।
আত্মসত্তার সঙ্গে ভিন্নসত্তার প্রত্যক্ষ বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে সামাজিক সত্যের বিবরণ তৈরী নৃবিজ্ঞানের আদি শাস্ত্রীয় অভিজ্ঞান। সমাজ বাস্তব আর তার পরিগঠনকে সপ্রশ্ন বোঝাপড়ায় মোকাবেলা করতে গিয়ে নৃবিজ্ঞানীর আত্মসত্তাও এক সময় নিজের আটপৌরে জীবনে সত্যজিৎ এর ছবির চরিত্রের মত ‘আগন্তুক’ হয়ে পড়ে। গবেষণায় মুখোমুখি হওয়া তীব্র বাস্তব তাকে শুধু অভিনব সব প্রশ্নের মুখেই দাঁড় করায় না, প্রায়শই তার অস্তিত্ববোধে এক দার্শনিক বিপন্নতাও ছড়িয়ে দেয়।
উনবিংশ শতকের প্রথমার্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মার্গারেট মীড, রুথ বেনেডিক্ট, এবং জোরা নিয়েল হার্স্টনরা নিজেদের নৃবিদ্যা দিয়ে বর্ণ, যৌনতা, বা লৈঙ্গিক সম্পর্ক নিয়ে পশ্চিমা চিন্তার পাটাতন বদলে দিতে চেয়েছেন। আদিম সরল সমাজে নারী অস্তিত্বের অভিনব অভিজ্ঞান দিয়ে ব্যক্তিস্বত্তা আর যৌথসত্তার সম্পর্ককে ব্যবচ্ছেদ করতে চেয়েছেন তারা। নৃবিজ্ঞান দিয়ে পশ্চিমা-পুরুষতান্ত্রিক চিন্তার আদল ভাঙতে গিয়ে তাঁদের যুগপৎ নারী ও নৃবিজ্ঞানী সত্তাকেও ক্ষত-বিক্ষত হতে হয়েছে। ১৯৩২ সালের নিউগিনি থেকে ফেরার পথে, ম্যালেরিয়া রোগে বিধ্বস্ত; অভিনব সমাজ বাস্তবে বদলে যাওয়া অস্তিত্ববোধ, আর সনাতন সম্পর্কের টানা-পোড়নে বিপন্ন মার্গারেট মীড লিখেছিলেন প্রিয়তমা রুথ বেনেডিক্টকে: ‘মাঠকর্ম তোমার চেনা দুনিয়াটিকে ধ্বসিয়ে দেয়ার কথা। বিয়ে ভেঙে গেছে। পুরনো সম্পর্কগুলো ক্ষয়ে গেছে। ঠিক-ঠাক নৃবিজ্ঞান করবার জন্য নিজেকে চেনা দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করতে হয়েছে। আরেক সমাজকে বুঝতে গিয়ে নিজের সমাজের কাণ্ডজ্ঞান বিসর্জন দিতে হয়েছে। কিন্তু বিনিময়ে আমি মুক্তির স্বাদ পেয়েছি, নিজের সমাজকে বোঝার অর্ন্তদৃষ্টি পেয়েছি, তাঁর আরোপিত মাহাত্ম্য ছাপিয়ে দুনিয়ার আর সব সমাজের একটি হিসেবে দেখার দৃষ্টি পেয়েছি।’
নারী হিসেবে নৃবিদ্যা দিয়ে প্রবল ক্ষমতাতন্ত্রের ব্যবচ্ছেদ কিংবা বিপরীতে দাঁড়ানোর প্রাত্যহিক লড়াইয়ের তীব্রতা যে গত এক শতাব্দীতেও বিন্দুমাত্র কমেনি, ফাতেমা শুভ্রার সাবলীল আখ্যান ভিন্ন ইতিহাসের জমিনে দাঁড়িয়ে ভিন্ন ভাষাতে সেই সাক্ষ্য দেয়।
পাঠক হিসেবে শুভ্রার এই সপ্রশ্ন আত্মানুভ্রমণের সাথী হলে নারী প্রশ্নে আপনার চেনা বাস্তবের চেনা বোঝাপড়াগুলো চমকে যাবে।

প্রকাশনী: আদর্শ প্রকাশনী
প্রচ্ছদ: সব্যসাচী মিস্ত্রি


ওয়েথু, মারমা লোকগল্প সংকলন

লেখক: অং মারমা

বইটি সম্পর্কে:

ওয়েথু-এর বাংলা গল্প। মূলত, বিশাল এই সাগরের জলে ডুবে যাওয়া কিছু নুড়ি পাথরের মতোই বলা যাবে এই গল্পগুলিকে। সেই সময়ের দিনগুলি ছিলো আমাদের গল্পের দিন। পাহাড়ের ডগায় মাচাং ঘরে, মা- নানীদের কোলে মাথায় রেখে শুনে শান্তিতে ঘুম দিতে পারার দিন। নানান আগ্রাসনে নিভে যায় যায় এখন এই গল্পগুলির প্রাণ। নেই আর আগের মতো সেইসব ঘর, নেই কারোর মুখে আর গল্প। হাতে হয় থাকে বই, নয়তো মুঠোফোন। যান্ত্রিকতায় বন্দী পাহাড়, পাহাড়ের শিশুটিও। অথচ, আমাদের এই জীবন গল্পকে কখনো অস্বীকার করতে পারে না। এই এক বিরাট সম্পর্ক জড়িয়ে রয়েছে পাহাড়ের কোণায় কোণায়। সেই সব মুমূর্ষু গল্পগুলিকে পাতায় তুলে চেষ্টা করেছি বাঁচানো যায় কি না। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য ও বাংলাদেশের প্রান্তিক অঞ্চল থেকে সংগ্রহিত আটটি মারমা লোকগল্প নিয়েই ওয়েথু। লেখক: অং মারমা, প্রকাশক ও সম্পাদনা: জাহিদ জগৎ

প্রকাশনী: অদ্বৈত
প্রচ্ছদ: তুফান চাকমা

Share