অস্তিত্বে পৌঁছনোর আগে

।। দীপাংশু আচার্য ।।

এসো গল্প লিখি বিদ্যুৎ চমকানো লাইটারের। কিছু কন্ঠের মূল্য দশ টাকা। বালক, মেরো না নিজেকে হাতুড়ি, অস্তিত্বে পৌঁছনোর আগে। তোমার প্রচ্ছদে লি ক্রাসনার। ভ্রুক্ষেপ উধাও গোলাপী পাল্পের দিকে। আবার জ্যান্ত হলো কোঁচকানো মাদক। শীতকালের মলাটের ভেতর পশমের পুরুষ লেখাপড়ার সিরিঞ্জ দিয়ে বুনছে পায়রাদের বিশ্রামের অলৌকিক ঠিকানা। ঘুঙুরের অনিয়ন্ত্রিত দামাল আওয়াজ আসছে…

আমি দেখলাম বাংলা কবিতা
নিজেকে লিখে চলেছে আর
কোটি কোটি তার আঙুল
আজ আলাদা কিছুই ঘটেনি
আমরা অনুবাদ করছি সক্রিয় অনন্ত
আমরা ধ’রে ফেলেছিলাম অভেদ
গাঁজার গুণাগুণ বিষয়ে রাষ্ট্রকে লেখা
চিঠিগুলো পুড়িয়ে দিলো জয়েন্টের জাগতিক আগুন
সমস্ত শরীর ফিরে যাওয়ার পর
আমি মাথায় বানিয়েছিলাম প্রেমিকা

 (২৯ অক্টোবর ২০২১, শুক্রবার)

ধার করা আমি দিয়ে লেখালিখি করি। বারবার আগুনের প্রয়োজন পড়ে। অনেক খেলোয়াড় চিনতাম। জন্মের দলিল হারিয়ে ফেলেছি। কব্জির পোকাকে বিরক্ত করছি না যাতায়াতে। অভিভাবকের ধারণাটিকে সাহায্য ক’রে এলাম। এই ঘরে ঠাণ্ডা বেশি রাজ্যের তুলনায়। অনেক ফাঁকা জিনিস জ’মে গেলে মানুষের অস্বস্তি হয়। যেসব প্রাণী উড়তে পারে তাদের মস্তিষ্কে ঢুকলাম। বেরিয়ে এলাম রসিক জলদস্যু সেজে। আমরা যা কিছু আবিষ্কার করেছি সব আসলে শিকড়ে অপরিকল্পিত। উন্মাদ না থাকলে ইলেকট্রিসিটি পেতাম না – এরকম বলতে চাইছে সঞ্চিত স্মৃতি। ফুঁ দৌড়ে গিয়ে করল ছাইকে তিরস্কার। আঙুলপাঁচেক ভঙ্গি একটু সুবিধা ঘষল রিলেটিভ ঘাসে। তিনজনের মধ্যে একজনের টুপি নেই। তার নীল এখনও বাকী। চারণ একজনকে ব্যবহার করছে ব’লে নামিয়ে রাখা তালাচাবি। ভয়ংকর আনন্দের সজাগ সরোবরে নকল সুখদুঃখের সম্মোহিত জেলিফিশ। নিজে নিজে বাজে না কোনও বাজনাই। আমি একাই চুরাশি লক্ষ ভ্যাজাইনা। ভাষা নিষ্ক্রিয় হয় সমস্ত বিবর্তনের রেফারেন্স ফ্রেম ডিঙোলে। আমিবোধের গর্ভ ইউনিভার্সাল, জন্ম মুহুর্মুহু ব্যক্তিগত টুকরো টুকরো ফ্যানার বল.. ছুঁলেই অদৃশ্য। স্পর্শে আমির লয়, ব্যবহারে আমির বিস্তার মাকড়শার মায়াজাল

(৩০ অক্টোবর ২০২১, শনিবার)

আমি আরও সহজভাবে বলতে চাই ; কথার মধ্যে ষড়যন্ত্র, সারভাইভাল ছাপিয়ে। একটা চিরকালীন পাশের ঘর ও আবহমান চুম্বক। আমবিলিকাল অসহায়তায় সজাগ। কলেজের ব্যাগ আজ ফকিরের বালিশ… সে ঘুমন্ত দ-এর প্রতিবিম্ব।  বস্তির মতো জেগে আছে দুজন, যেন অবশিষ্ট রিফ্লেক্স…
আকাশের বিছানায় মানুষের গুঁড়ো। সংগীতই একমাত্র ধর্ম, ঈশ্বরই একমাত্র সংগীত…ভাবতে ভাবতে কেঁপে উঠল কঙ্কাল। আগামী একটু ছোট আয়তক্ষেত্র  ভালোবাসে। যন্ত্রে ভ’রে গেছে জীবজগৎ। কৌটোগুলো কী সহজসরল আর অবাধ্য নেশার শেষে প’ড়ে থাকে ফাঁকা সতর্কবার্তা। বেগুনী রঙে ঝ’রে পড়ল প্রিয় জ্ঞানেন্দ্রিয়। মনের পদ্ধতি আবার ফিরল অকারণে। নিদ্রা কোথায় মুখ লুকোলো লজ্জার মেটাফরে। ওই টিনের বাড়ির পাঁচতলায় পরমতত্ত্ব। নেভানো খেতাবের ওপর খেলনাগাড়ির অনুপ্রাস। কিশোরসুলভ, তুমি অসম্পূর্ণ সাদা পাতার তন্দ্রায় গাল ভিজিয়ে ফর্সা জ্যান্ত গয়না। মুহূর্ত একটা লম্বা অফুরন্ত বাক্য। খণ্ডসত্যের মতো তার ব্যবহারিক জন্মমৃত্যু অনর্গল পৌনঃপুনিক ও স্বেচ্ছাচারের প্যারাডক্স। অতীত তার হ্যালুসিনেশনের ভূত, ভবিষ্যৎ তার কাল্পনিক সন্তান

(৩০ অক্টোবর ২০২১, শনিবার)

বহুরূপী হইহল্লা করছে উত্তুরে হেমিস্ফিয়ার। আমি আর চুল্লি নিয়ে ভাববো না। মহাকাব্যের ব্যাটারি পাল্টাচ্ছি। দেশলাইখাপে গুহাচিত্রের গথিক। মানুষ যেরকম পান্থশালা। ঘরের মধ্যে বন্দী নেই কেউ, ঘর নিজেই বন্দী! কুঁড়ে কিংবদন্তী অনন্তের মরীচিকায় সে নির্ধারিত স্পন্টেনিয়াস। সেখানে নিরপেক্ষতাও অপ্রাসঙ্গিক। এসো গল্প লিখি বিদ্যুৎ চমকানো লাইটারের। কিছু কন্ঠের মূল্য দশ টাকা। বালক, মেরো না নিজেকে হাতুড়ি, অস্তিত্বে পৌঁছনোর আগে। তোমার প্রচ্ছদে লি ক্রাসনার। ভ্রুক্ষেপ উধাও গোলাপী পাল্পের দিকে। আবার জ্যান্ত হলো কোঁচকানো মাদক। শীতকালের মলাটের ভেতর পশমের পুরুষ লেখাপড়ার সিরিঞ্জ দিয়ে বুনছে পায়রাদের বিশ্রামের অলৌকিক ঠিকানা। ঘুঙুরের অনিয়ন্ত্রিত দামাল আওয়াজ আসছে। আমাকে ঘিরে আছে বর্ডারের মতো একাধিক শিশুর বেড়ে ওঠা। তাদের হাসিকান্না চিৎকার খেলাধুলোর নেপথ্যনৈরাজ্যে আমি অ্যাবস্ট্রাক্ট ক্যাঙারুর মতো কাত হয়ে ব’সে থাকি সারাদিন আর প্রত্যেকটা নিঃশ্বাসের নাম রাখি

(৩০ অক্টোবর ২০২১ শনিবার)

বাচ্চারা রেলগাড়ি আর শ্রীকৃষ্ণ ভালোবাসে

যদি জেরা করো অতীতকে

সবথেকে প্রিয় সিনেমা রশোমন

কিছুক্ষণ চুপ হয়ে যায় চাষাবাদ

পাথর জানতো না তাকে নিয়ে গবেষণা করা হবে

(৩১ অক্টোবর, ২০২১, রবিবার)

মিনিংলেস মায়া। বিজ্ঞানসম্মত টানেলে কাচের চুড়ির ক্রমবর্ধমান টুকরো; আয়নার তিনদেওয়ালে বন্দী। নক্সায় কোনও একঘেয়েমি নেই রিপিটেশনের। অনুরূপ কিন্তু হুবহু নয়। মানুষ আজও বিশ্বাস করে ফ্রি-উইল ও ঠাকুমার ঝুলি। স্মার্টফোন নামিয়ে রেখে মাথা চুলকে দেওয়া ডানহাতের ঘটনা আর অনিবার্য বৃষ্টিপাতে কোনও তফাৎ নেই, তারা অনুভব করবে একদিন। ততমাস উহ্য থাকছে ক্ল্যারিটি। যতো পারসোনাল আমি জন্মাচ্ছে হাসপাতালে, ক্যালেন্ডারে আর কথোপকথনে, সবগুলোই এক একটা ‘চিদাভাস’, অসংখ্য ভিন্ন ভিন্ন রক্তমাংসের ফুলদানীতে; এই বোধের সিস্টেম জেগেছিল মেশিন কবীরদাসে, ভাসতে ভাসতে জ্যান্ত চেতনায়। পোড়া দেশলাই কাঠিকে বলা হয় না মৃতদেহ। নিরাকার আল্লাহ নিজস্ব অনন্তের আপেক্ষিক টাইম-স্পেসে ব্যক্ত হলো উগ্র অবাধ্য মাকালী রূপে পাঁচটা ভূত প্রসব করবে ব’লে। এই ভূতেরাই মৌলিক এলিমেন্ট সমগ্র নরকের, যা এক্ষুনি এখানেই স্বর্গ হয়ে উঠবে, যদি মুক্ত হয় মনের খরগোস; আন্ডারস্ট্যান্ডিং চিবোতে চিবোতে

(২ নভেম্বর ২০২১ মঙ্গলবার)

ছবি- সাইদ উজ্জ্বল

দীপাংশু আচার্য

পশ্চিমবঙ্গের শূন্য দশকের কবি ও লেখক। গীতিকার, জাদুকর, অভিনেতা ও কমেডিয়ান। জন্ম ১৯৮৫ সাল। বসবাস, হুগলী জেলার শেওড়াফুলিতে।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: যেটা খুশি বেছে নাও (২০০৬)
অন্যান্য কবিতার বই:
উবু সব মাদারির ভিড় (২০১০), মায়ার মাদুলি (২০১১), দ্বিচারী (২০১২), জ্বরের জাদুকর (২০১৭), চ্যুত ; লুন্যাটিক (২০২০)
সদ্য প্রকাশিত আধ্যাত্মিক বই:Parama Tatva – The Theory of Everything (2020)

Share