অনন্ত কারবালার দিকে

।। সাইদ উজ্জ্বল ।।

কেউ কোনোদিন জানবে না
দুনিয়ার পেটভর্তি বিষ ও বারুদে
কিয়ামত নেমে এলে
কীভাবে আমরা ফিরে গেছি আবার
সাগরের লবণাক্ততায়।

ধুলার পিতা

মাটির বিছানা ছেড়ে
ওঠো, হে ধুলার পিতা!
বিষণ্ণ ফাতেমার মুখে
দ্যাখো, কীভাবে ছড়িয়ে পড়ছে কান্নার নদী।

ঘিরে থাকা পবিত্র আলোর রাশি
ঘনিভূত হচ্ছে কা’বার কিবলায়
মরুর মিনার থেকে ভেসে আসছে
শোকের সঙ্গীত

কোথাও ছুরি হাতে তৈরি হচ্ছে
খুনি ইয়াজিদ
তোমার সিনা থেকে কেটে নিতে
তোমার হোসাইন।

ওঠো, হে ধুলার পিতা!
ফাতিমার নিঃসঙ্গ কবর ছেড়ে
হেঁটে যাও অনন্ত কারবালার দিকে…

অষ্টগ্রাম

দূরে, একা একটি বাড়ি
মেঘগুলো নেমে এসছে তার উসারায়
ডলক নামার আগে
হাঁসের বাচ্চাগুলো ঢুকে যাবে মেঘের মসজিদে।

হাওরের সমস্ত পানি শুষে নিয়ে
একটি বিশাল চিতল মাছের পেট
মিশে গেছে কালো আকাশের বুকে।

এখানে সেখানে
পাক খায় র্জামুনির দল
তার পাশ কেটে কেটে
ধাবমান মেশিনের নৌকা
চিৎকার করে চলে যায়।

একটি বিলাই সমস্ত দুর্যোগ উপেক্ষা করে
খড়ের লাশের পাশে উঁৎ পেতে বসে থাকে।

নীল বুড়ি পাখিটি উড়ে যায়

আমরা একখন্ড মাটি নিয়ে বসে থাকি
আর হঠাৎ, প্রচন্ড ঠাডার আলোতে
জেগে ওঠে সমস্ত অষ্টগ্রাম।

পুনর্জীবন

পাতার সবুজ থেকে
বের হয়ে এলো অসংখ্য নখের দাগ

খণ্ড খণ্ড মানুষের শরীরগুলো
কবরের নিস্তব্ধতাকে সঙ্গী করে
মিশে গেছে লতাগুল্মের শিরায় শিরায় ।

মৃত গাছের হাড়গোড়গুলো
সামান্য ছায়াকে পাশে রেখে
দিন গুনছে
যদি একটি ঝড় এসে
তাদের গিলে ফেলে।

কিছু গাছ জেগে আছে
একদিন এই সবুজ পাতাগুলো থেকে
বের হয়ে আসবে অসংখ্য মানুষের মুখ
সেই অপেক্ষায়।

দূরে, সারিবদ্ধ পিঁপড়ার গান শোনা যায়
আর অস্তগামী আলোর রেখা ধরে
নেমে আসে সমস্ত হাইঞ্জাবেলা

পাহাড় সম্পর্কিত

পাহাড়ের ফাঁক গলে নেমে আসে মেঘ
এইটুকু লিখে ভাবি
আমি তো পাহাড়ে যাই নি কোনোদিন

ওইপারে ডুবে যাওয়া সূর্যের শরীরে
কীভাবে মিশে গেছে কমলা রঙের মেঘ
তা শুধু কল্পনায় ভেবে নিয়েছি

দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড়
গর্ভে তার সবুজ বনভূমি, স্থির
বয়ে চলা নদী হয়তো কথা বলে রোজ
আর কান্নার গানগুলো ঝরে পড়ে
গাদলা দিনের বৃষ্টির সাথে

ফকির, দরবেশের কথা শুনেছি
যারা পাহাড়ে গিয়ে হারিয়ে যায়
বসতির বিলাইগুলোর মতো

হয়তো পাহাড়ে গেলে
আমিও ফিরবো না কোনোদিন

নুনজন্ম

ময়ুরের ডানায় আঁকা চোখে
যে তুমি সঙ্কেত দ্যাখো বৃষ্টি ও ঝড়ের
নৃত্যের ভঙ্গিমায়
ছড়িয়ে দাও বাতাসের লালা
দ্যাখো
কোথাও সমুদ্র বুঝি ঢেউ থেকে ছিটকে
নেমে এসেছে এই লবণের ক্ষেতে

মৃত আত্মার ফসিল মনে করে
একমুঠো লবণ ছুঁড়ে দিতে পারো শূন্যে
সাদা সাদা বীজগুলো ছড়িয়ে পড়ুক
আর সবাই দেখুক নুনের জীবনচক্র

কেউ কোনোদিন জানবে না
দুনিয়ার পেটভর্তি বিষ ও বারুদে
কিয়ামত নেমে এলে
কীভাবে আমরা ফিরে গেছি আবার
সাগরের লবণাক্ততায়।

অলংকরণে: কবি স্বয়ং

সাইদ উজ্জ্বল

কবি ও রাজনৈতিক কর্মী
প্রকাশিত কবিতার বই:
মম বাক্য ধরো (২০১৬)
দ্বিতীয় প্রজাপতি (২০১৯)
জন্ম: কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ।

Share